অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে মিছিল। বুধবার, কড়েয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
খুনের পিছনে কি শুধুই ৩০ বর্গফুট? নাকি বড় কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত? কড়েয়ার প্রোমোটার আতিকুল রহমান ওরফে ফজলুর রহমানের খুনের তদন্তে উঠে আসছে এমনই নানা প্রশ্ন। অভিযুক্ত শেখ ইদ্রিস ওরফে লম্বু ভোলাকে জেরা করে সেই তথ্যই পাওয়ার চেষ্টা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। সঙ্গে দফায় দফায় জেরা চলছে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে থাকা তিন পড়শি ও নিহত আতিকুলের ব্যবসার এক অংশীদার আসগর-সহ দুই সঙ্গী সাজিদ ও আসলামেরও। এই খুনের পিছনে অন্য কারও হাত থাকতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে কড়েয়া ব্রাইট স্ট্রিটে বন্ধু প্রোমোটারকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে অপর প্রোমোটার, পড়শি শেখ ইদ্রিস ওরফে লম্বু ভোলার বিরুদ্ধে। ওই সন্ধ্যাতেই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ভোলাকে। কিন্তু তদন্ত এগোতেই হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়, এই খুনে আরও বড় কোনও মাথাও রয়েছে।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ব্যবসার অংশীদার ও দুই সঙ্গীর সামনে সাত সকালে এক জন এসে আচমকা মাথা গরম করে গুলি চালিয়ে বেরিয়ে গেল, আর কেউ আটকাল না! কোনও বড় মাথার হাত না থাকলে এটা সম্ভব নয়।’’ আতিকুলকে সরালে কার কার লাভ হতে পারে, গোয়েন্দারা তা খতিয়ে দেখছেন। সেই ছক ধরে এগোলে উঠে আসছে বাচ্চা রাজা বলে এক দুষ্কৃতীর নাম। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, কড়েয়া এলাকায় প্রোমোটিং বা জায়গা কেনাবেচার ব়ড় মাথা এই বাচ্চা রাজা। তার অধীনে লম্বু ভোলা থেকে শুরু করে আসগর, সাজিদ, আসলামেরা কাজ করে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাচ্চা রাজার গ্যাং ওই এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়। লম্বু ভোলা বাচ্চা রাজার হয়েই কাজ করছিল। ফলে আতিকুলকে খুনের ছক বাচ্চা রাজারও হতে পারে বলেও অনুমান গোয়েন্দাদের। কারণ প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, পড়শি তিন ব্যক্তি ছাড়াও আরও চার জন ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল। ওই চার জনের খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। মনে করা হচ্ছে, বাচ্চা রাজার গ্যাংয়ের চার জনকে সঙ্গে নিয়েই খুন করতে এসেছিল লম্বু।
প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, ভোলার বাড়ির পিছনের গলিতে মোটরবাইক নিয়ে চার যুবক অপেক্ষা করছিল। গুলি চালানোর পরে আতিকুলকে পড়ে যেতে দেখে হেঁটে ওই যুবকদের সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বেরিয়ে যায় ভোলা। ফলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা ঠিক হলে ভোলা পরিকল্পনা করেই আতিকুলকে খুন করেছে এবং তাতে আরও কারও হাত আছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে গোয়েন্দারা এও জানাচ্ছেন, ঘটনাস্থলে থাকা আরও তিন পড়শি তথা আতিকুলের ব্যবসার আর এক অংশীদার আসগর ও দুই সঙ্গী সাজিদ ও আসলামের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ আছে। কারণ তারা কেউ ভোলাকে আটকায়নি। এ দিকে, বুধবার অভিযুক্ত লম্বু ভোলাকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সেখানে ঘটনার পুনর্নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছিল সরকারি তরফে। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। লম্বু ভোলার ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতও হয়েছে।