প্রতীকী ছবি।
বয়স পেরিয়ে গেলেও ঋতুস্রাব হত না। বদলে কয়েক মাস অন্তর তীব্র পেটের যন্ত্রণা হত পঁচিশ বছরের তরুণীর। পরীক্ষায় দেখা যায়, ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালী থাকলেও তাঁর যোনিদ্বার এবং জরায়ু নেই। যাকে বলা হয় ‘রকিটান্সকি সিনড্রোম’। তাতেই আক্রান্ত হওয়ায় তরুণীর ঋতুস্রাব হচ্ছিল না বলে জানান চিকিৎসকেরা। ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে যোনিদ্বার এবং জরায়ু তৈরি করে তরুণীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিল সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতাল।
সম্প্রতি কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ওই তরুণীর অস্ত্রোপচার করেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং পলি চট্টোপাধ্যায়। অ্যানাস্থেটিস্ট হিসাবে ছিলেন টি কে ঘোষ। অভিনিবেশ বলেন,‘‘এটি জন্মগত ত্রুটি। পাঁচ হাজার জনের মধ্যে এক জনের এমন সমস্যা দেখা যায়।’’ স্বাভাবিক ভাবে দু’টি মুলেরিয়ান নালি ডান ও বাঁ পাশ দিয়ে নীচের দিকে নেমে জরায়ু ও যোনিদ্বার তৈরি হয়। কিন্তু ওই তরুণীর ক্ষেত্রে তা না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যেটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘মুলেরিয়ান ডাক্ট অ্যানোমালি’। রোগীকে দেখার সময়ই অস্ত্রোপচারের কথা জানিয়েছিলেন অভিনিবেশ। বছর দেড়েক পরে ফের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্ত্রোপচার করাতে চায় তরুণীর পরিবার।
ল্যাপারোস্কোপিতে দেখা যায়, তরুণীর ডান দিকের মুলেরিয়ান নালি মাত্র এক সেন্টিমিটার লম্বা এবং তিন সেন্টিমিটার মতো বাঁ দিকের নালিটি রয়েছে ডিম্বাশয়ের পাশে। প্রথমে ল্যাপারোস্কোপিরমাধ্যমে প্রস্রাবের থলি এবং পায়ুদ্বারের মঝে যোনিদ্বার তৈরি করা হয়। এর পরে বাঁ দিকের মুলেরিয়ান নালিটি যোনিদ্বার পর্যন্ত নামিয়ে এনে দু’টিকে যুক্ত করা হয়। ওই নালিটি ফুলে থাকার কারণ জানতে সেটিকে কাটতেই ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের অল্প রক্ত বার হয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।
ওই নালির ভিতরে ‘এন্ডোমেট্রিয়াম’ (জরায়ুর ভিতরের গ্রন্থিময় কলাস্তর) এবং অন্যান্য অংশ দেখে চিকিৎসকেরা বোঝেন ‘অ্যানাস্টোমোসিস’ করলে তরুণীর ঋতুস্রাব হতে পারে। এর পরে যোনিদ্বারের মাথার অংশ কেটে তার সঙ্গে ওই নালিকে যুক্ত করা হয়। দু’টির মাঝে সিলিকন ফলে ক্যাথিটারকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অভিনিবেশ বলেন,‘‘যে জরায়ু তৈরি করা হয়েছে, সেটিকে ওষুধ দিয়ে বাড়ানো সম্ভব। তাতে স্বাভাবিক ঋতুস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দিনে সন্তান ধারণও সম্ভব হতে পারে।’’
এসএসকেএমের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সরকারি স্তরেও যোনিদ্বার তৈরির অস্ত্রোপচার হচ্ছে। তবে অ্যানাস্টোমোসিস করার পরে কতটা কার্যকর থাকছে, সে দিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। ঋতুস্রাব শুরু হলে
সেটি প্রাথমিক সাফল্য। তার পরে সন্তানধারণ হলে সেটি বিরল হবে।’’