এই মূল্যবৃদ্ধি কোথায় গিয়ে থামবে, কেউ জানে না।—নিজস্ব চিত্র।
একে ভাড়া বাড়ছে না, তার উপরে টানা ১৬ দিন ধরে বেড়েই চলেছে জ্বালানি তেলের দাম। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় গাড়ি নামাতে গিয়ে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা বাস-মিনিবাস মালিকদের। সোমবার কলকাতায় ডিজেলের প্রতি লিটারের দাম ৭৪ টাকা ছাড়িয়েছে। ভাড়া নিয়ে জট তো ছিলই, এ বার ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকায় রাস্তা থেকে একে একে উধাও হয়ে যাচ্ছে বাস। নাজেহাল হচ্ছেন যাত্রীরা। আরও দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা।
যাত্রীদের অভিযোগ, অফিস টাইম ছাড়া বেসরকারি বাস-মিনিবাস চোখে পড়ছে না। সরকারি বাসে ঠাসা ভিড় হচ্ছে। করোনার বিধিনিষেধ মানার বালাই নেই। অন্য দিকে টানা ১৬ দিন বাড়তে বাড়তে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি প্রায় ৯ টাকা বেড়ে গিয়েছে। আরো বড়তে পারে। বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকেরা বলছেন, ঘর থেকে টাকা দিয়ে কত দিন গাড়ি চালানো যায়? সে বিষয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্র চুপ! এই মূল্যবৃদ্ধি কোথায় গিয়ে থামবে, কেউ জানে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসমালিক জানালেন, “পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে বহু মানুষের সংসার জড়িত। ফলে তাঁদের কথা চিন্তা করে গাড়ি নামাতে হচ্ছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে ঘর থেকেই টাকা চলে গিয়েছে। এমন অবস্থা চললে বেশি দিন বাস চালানো যাবে না।”
আরও পড়ুন: আক্রান্ত ছাড়াল সওয়া চার লক্ষ, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু আরও ৪৪৫ জনের
সোমবার সকাল থেকে বেসরকারি বাসের সংখ্যা কম। মিনিবাসও নেমেছে হাতে গোনা। অফিস টাইমে গাড়ি চললেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বসে যাচ্ছে গাড়ি। বৃহত্তর কলকাতায় আগে দিনে ৩ থেকে ৪টে ট্রিপ হত। তা এখন ২টোয় নেমে গিয়েছে। অভিযোগ, যত আসন, তত যাত্রী নিয়ে বাস অথবা মিনিবাস চালাতে গিয়ে আগেই ক্ষতি সামলাতে হচ্ছিল। তার উপর গত ১৬ দিনে প্রায় ৯ টাকার মতো প্রতি লিটারে ডিজেলের দাম বেড়েছে। রাজ্য বা কেন্দ্র, কোনও সরকারেরই হেলদোল নেই বলে অভিযোগ বাস মালিক সংগঠনগুলির। তাঁদের দাবি, বৃহত্তর কলকাতায় তিনটি ট্রিপে একটি বাস চালাতে গেলে মোটামুটি ৫০ থেকে ৫৫ লিটার তেল লাগে। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫০০ টাকা তেলের খরচা হচ্ছে।
কয়েক দিন আগেই রেগুলেটারি কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসে বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলি। তারা প্রতিদিন, মাসে এবং বছরে একটি বাস চালাতে গেলে, কত খরচ হয়, তার হিসেবও পেশ করে। তার ভিত্তিতেই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন মালিকেরা।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর থেকে ঢুকেছে ৪-৫ জঙ্গি? দিল্লিতে জঙ্গি হানার সতর্কতা
প্রতিটি রুটেই হাতে গোনা বাস চলছে। অনেক বাসই গ্যারাজে চলে গিয়েছে। বাস চালাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না অনেকেই। বিষয়টি স্বীকার করে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা সত্যি বাস অনেক কমে গিয়েছে। কিছু করার নেই। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে কত দিন বাস-মিনিবাস চালাবেন মালিকেরা। কর্মচারীদের বেতন থেকে তেল আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ আছে। তা হিসেব করলে ভাড়া বাড়ানো সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মনে হবে না। ৯০ শতাংশ গাড়ি চলছে না।”