সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার পরে, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজে সুষ্ঠু নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পরিকাঠামো গড়ার দাবি তুলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই আবহে কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক চলাকালীন হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে এক দল জুনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ফলে, মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় বৈঠক। শুক্রবার ফের বৈঠক বসে। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি খোদ অধ্যক্ষ নিজেই ওই মেডিক্যাল কলেজে নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুললেন। এমনকি, এমআরআই, সিটি স্ক্যান পরীক্ষায় দুর্নীতি বন্ধের চেষ্টার জন্য তাঁকে প্রায় দু’বছর ধরে হুমকি শুনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ অধ্যক্ষের।
অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বৈঠকের সময়ে হামলা চালিয়েছিল ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং ওই মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের দলবল। সেই ঘটনায় চোখে আঘাত পাওয়া স্নাতকোত্তর স্তরের চিকিৎসক-পড়ুয়া মনোজিৎ মুখোপাধ্যায়
এ দিন কামারহাটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই কলেজে এক শ্রেণির চিকিৎসক-পড়ুয়া দাদাগিরি চালাচ্ছেন। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন চালানোর জন্য তাঁরা হুমকি দিচ্ছেন। আমরা কলেজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। তোলাবাজি বন্ধ করে নিয়ম মেনে সুষ্ঠু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখাই আমাদের দাবি।’’
হুমকির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন মনোজিৎ-সহ অন্য চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। এ দিন ফের সেই বৈঠকে জুনিয়র
চিকিৎসকেরা হুমকি-দাদাগিরির বিরুদ্ধে সরব হন। সূত্রের খবর, বৈঠকে হাজির সিনিয়র
চিকিৎসকেরাও ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র দাপটের বিরুদ্ধে সরব হন। পুলিশের তরফেও হাসপাতালে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে এ দিন সরব হন অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানও। তিনি বলেন, ‘‘পাশ করে গেলেও হস্টেল দখল করে থাকতেন বিরূপাক্ষ। এবং এখানে রীতিমতো দল তৈরি করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম শুরু করেছিলেন। পুলিশে অভিযোগ করিয়ে ওঁকে হস্টেল থেকেই গ্রেফতার করাই।’’ পার্থপ্রতিমের অভিযোগ, গোটা হাসপাতাল
জুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মদত রয়েছে। আরও অভিযোগ, পিপিপি মডেলে চলা কেন্দ্রে বহিরাগত রোগীদের এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা বিনামূল্যে করানো হচ্ছিল সাগর দত্ত হাসপাতালে। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে আসতেই বাধা দিই। তাতে আগে যেখানে সরকারকে
ওই সমস্ত পরীক্ষা বাবদ বছরে দু’কোটি টাকা বিল মেটাতে হত, সেটা এখন ৩০-৪০ লক্ষে নেমে এসেছে।’’
ডাক্তারি পডুয়াদের ভর্তির সময়ে টাকা তোলা, ক্লাস না করেও পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা, প্রশ্ন ফাঁস, গণ টোকাটুকির মতো অভিযোগ থেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল মুক্ত নয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন অধ্যক্ষ। এবং সেই কাজে বিরূপাক্ষ বাহিনীর ভূমিকা
নিয়েও তিনি সরব হয়েছেন। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী জুনিয়র
চিকিৎসকদের তরফে বিরূপাক্ষ-ঘনিষ্ঠ ১৫ জনের বিরুদ্ধে হুমকি ও হামলা চালানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অন্য দিকে, অপর পক্ষও একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ দুই পক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখছে।