প্রাক্তনীর সেরা সম্মানে উচ্ছ্বসিত প্রেসিডেন্সি

ইংরেজি বিভাগের দুই পড়ুয়া দেবদত্ত সাহা এবং অনিশা পাল জানালেন, দীপাবলিতে তাঁরা পরিকল্পনা করেছেন পথশিশুদের নতুন পোশাক দেবেন।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

করিডরে অর্থনীতি বিভাগের বিশিষ্টদের ছবি-পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে নোবেলজয়ীর নামও। নিজস্ব চিত্র

এই মুহূর্তে পুজোর ছুটি চলছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার মধ্যেও সোমবার হাতে গোনা যে ক’জন ছাত্রছাত্রী এসেছিলেন, শেষ বিকেলে তাঁরা সকলে উচ্ছ্বসিত। উপলক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনীর নোবেল জয়।

Advertisement

ইংরেজি বিভাগের দুই পড়ুয়া দেবদত্ত সাহা এবং অনিশা পাল জানালেন, দীপাবলিতে তাঁরা পরিকল্পনা করেছেন পথশিশুদের নতুন পোশাক দেবেন। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল প্রাপ্তির খবর পাওয়ার পরে তাঁরা ঠিক করেছেন, ওই অনুষ্ঠান অভিজিৎবাবুর নোবেল প্রাপ্তিকে উৎসর্গ করবেন। অনিশা জানালেন, দারিদ্র্যের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসূত্র অভিজিৎবাবু খুঁজেছেন তাঁর গবেষণায়। তাই পথশিশুদের জন্য তাঁদের উদ্যোগ অভিজিৎবাবুর নোবেল প্রাপ্তিকে উৎসর্গ করাই যথাযথ হবে বলে তাঁর মত।

প্রেসিডেন্সির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনী অমর্ত্য সেনের পরে অভিজিৎবাবু। দুই বাঙালির নোবেল জয়ে ভীষণ খুশি বিভাগের পড়ুয়া দীপ্রজিৎ দেবনাথ। এ দিন দীপ্রজিৎ বলেন, ‘‘আমার বিভাগের এক দিকপাল আবার নোবেল পুরস্কার পেলেন। এ তো ভীষণ গর্বের। ভাল লাগছে, উনি দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। আমার মনে হয়, আজকের দিনে প্রত্যেক অর্থনীতিবিদের এই বিষয়টির উপরে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’ অর্থনীতি বিভাগের আর এক পড়ুয়া মেহুলি দে-র বক্তব্য, অভিজিৎবাবুর গবেষণা খুবই যুগোপযোগী। অমর্ত্য সেনের পরে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়— তাঁর বিভাগের দু’জন নোবেলজয়ী। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত মেহুলি।

Advertisement

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজিৎবাবুর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত লেকচার রুম। নিজস্ব চিত্র

খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারও। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এখন দেশের বাইরে। রেজিস্ট্রার জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নোবেলজয়ীকে অভিনন্দন-বার্তা পাঠানো হয়েছে। প্রেসিডেন্সির ওয়েবসাইটেও অভিজিৎবাবুকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হবে তিনি দেশে এলেই। উল্লেখ্য, অভিজিৎবাবুর বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন প্রেসিডেন্সিরই অর্থনীতির শিক্ষক। তাঁর নামে অর্থনীতি বিভাগে রয়েছে লেকচার রুম। প্রতি বছর আয়োজন করা হয় দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা। মূল ভাবনা অভিজিৎবাবুর। এ বার অভিজিৎবাবুর সঙ্গেই নোবেল পেয়েছেন এস্থার দুফ্লো। ব্যক্তিগত জীবনে অভিজিৎবাবুর স্ত্রী এস্থার গত বছর প্রেসিডেন্সিতে দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ওয়েবসাইটে তাঁকেও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্সির অর্থনীতির বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মৌসুমী দত্ত জানালেন, অর্থনীতি বিভাগের পঠনপাঠনের বিষয়ে সব সময়েই অভিজিৎবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। পরবর্তী দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক

বক্তৃতা আগামী মার্চ মাসে। এখন নিয়মিত সেই বিষয়ে অভিজিৎবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মৌসুমীদেবীরা। বিভাগীয় প্রধান আরও জানান, প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের সদস্য হিসেবে অর্থনীতি বিভাগের উন্নতির জন্য সদা সক্রিয় ছিলেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। মেন্টর গ্রুপের কাজ শেষ হয়ে গেলেও তাঁর সঙ্গে এখনও বিভাগের

ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

অর্থনীতি বিভাগে রয়েছে ‘প্রফেসর দীপক ব্যানার্জি লেকচার রুম’। অভিজিৎবাবুর ছাত্রাবস্থায় ওই ঘরটি পরিচিত ছিল ২৬ নম্বর ক্লাসঘর হিসেবে। উল্টো দিকেই ২১ নম্বর ক্লাসঘর। মৌসুমীদেবী জানালেন, এই দুই ক্লাসঘরে অভিজিৎবাবু ক্লাস করতেন। বারান্দা জুড়ে অর্থনীতি বিভাগের বিশিষ্টদের ছবি-সহ পরিচয় লাগানো। সেখানে রয়েছেন দীপক-অভিজিৎ দু’জনেই। প্রেসিডেন্সির মূল ভবনে রয়েছে ‘ওয়াল অব ফেম’। বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের নাম লেখা রয়েছে তার দেওয়ালে। এ বার সেখানে খুব তাড়াতাড়ি অভিজিৎবাবুর নামও খোদাই করা হবে বলে সূত্রের খবর।

প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদও খুব খুশি অভিজিৎবাবুর নোবেল প্রাপ্তিতে। সংসদের সচিব বিভাস চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘অভিজিৎবাবু এবং তাঁর স্ত্রী এস্থার— দু’জনকেই অকুণ্ঠ অভিনন্দন। অমর্ত্য সেনের পরে প্রেসিডেন্সির আর এক প্রাক্তনী নোবেল পেলেন — এ আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement