ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে চতুর্থীর সন্ধ্যা থেকেই শহরের পথে আছড়ে পড়েছে ঠাকুর দেখার ভিড়। যদিও বেশ কিছু পুজো কমিটির দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে তারা বদ্ধপরিকর। সংক্রমণ এড়াতে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অঞ্জলি দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট, তা তো বটেই, এমনকি ভোগ বিতরণেও তাঁরা সতর্কতা নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বেশ কিছু পুজো কমিটির কর্তারা।
যেমন, অতিমারি পরিস্থিতিতে ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীনের পুজোর বাজেট ৫০ লক্ষ থেকে নেমে এসেছে ১২ লক্ষ টাকায়। পুজোকর্তা সঞ্জয় মজুমদার জানালেন, মণ্ডপে শুধুমাত্র ঢাকি এবং হাতে গোনা কয়েক জনের প্রবেশাধিকার থাকবে। মণ্ডপ থেকে ভোগ বিতরণ নয়, বরং প্যাকেটে করে তা পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়ি বাড়ি। বাসিন্দারা যাতে বাড়িতে বসেই অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে পারেন, তার জন্য দুর্গাপ্রতিমার ছবি সব বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মণ্ডপের চার পাশে লাগানো হয়েছে মাইক। যাতে অষ্টমীর দিন মণ্ডপ থেকে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে পান এলাকার বাসিন্দারা। সেই মতো তাঁরা বাড়িতে বসে মন্ত্র পড়ে প্রতিমার ছবিতে ফুল দেবেন। পরে পুজো কমিটির কয়েক জন এবং ঢাকি ঢাক বাজিয়ে ওই ফুল সংগ্রহ করে মূল মণ্ডপে প্রতিমার পায়ে অর্পণ করবেন।
পুজোর চার দিন প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে ভোগ বিতরণ করত বালিগঞ্জ কালচারাল দুর্গোৎসব কমিটি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই তালিকায় কিছু কাটছাঁট করা যায় কি না, ভেবেছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু তার পরেও দেখা যায়, সেই সংখ্যা ৫০০-র নীচে নামানো যাচ্ছে না। সেই কারণে এ বার তাঁরা ভোগ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ রাখছেন বলে ওই পুজো কমিটির তরফে জানিয়েছেন অঞ্জন উকিল। তিনি আরও জানান, অঞ্জলি দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন নির্দিষ্ট কিছু বাসিন্দা। তাঁরা সকলে করোনার প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নিয়েছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাঁদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
ভোগ বিতরণ বন্ধ। এমনকি, সংক্রমণ রুখতে কাটা ফলও নয়। গোটা ফল দেওয়া হবে নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শনার্থীর হাতে। তাঁরা বাড়ি গিয়ে ওই ফল ধুয়ে খাবেন। এই পথেই এ বার হাঁটছে ভবানীপুরের অবসর সর্বজনীন। ওই পুজো কমিটির কর্তা শ্যামলনাথ দাস জানালেন, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া কয়েক জনকেই অঞ্জলি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
উত্তর কলকাতার হাতিবাগান সর্বজনীন এলাকার বাসিন্দাদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে অঞ্জলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি দলে থাকবেন ১০ জন। প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়া হয়েছে, এমন বাসিন্দাদেরই নাম রয়েছে ওই তালিকায়। পুজোকর্তা শাশ্বত বসু জানালেন, এর বাইরে আর কেউ অঞ্জলি দিতে পারবেন না। মণ্ডপ থেকে ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এ বার। পুজো কমিটির তরফে এলাকার নির্দিষ্ট কয়েকটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে ভোগ।
দুর্গোৎসবে যে কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তা আঁচ করে এ বার অঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক বাসিন্দাদের নামের তালিকা আগেভাগেই তৈরি করেছিল বাঁশদ্রোণী একতা পুজো কমিটি। সেই অনুযায়ী তাঁদের প্রত্যেককে মাস দুয়েক আগে প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী এ বার অষ্টমীর সকালে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা অনুপ ঘোষ। পাশাপাশি, সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ থাকছে ভোগ বিতরণও।