Poultry chicken

বেগুন-টোম্যাটোর দামে বিকোচ্ছে জ্যান্ত মুরগি! করোনা-আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে ক্রেতারা

বিক্রেতারা সাধাসাধি করেও ক্রেতাদের মুরগি কেনাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অভিযোগ উঠছে, এই সুযোগে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারছেন পাঠার মাংসের বিক্রিতারা। মুরগির মাংসের সাত গুণ দাম নিচ্ছেন তাঁরা!

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ১৬:১৮
Share:

বিক্রি কমেছে মুরগির। চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। ছবি: পিটিআই।

করোনা-আতঙ্কের জেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে মুরগির মাংসের দাম। কয়েক দিন আগেও যেখানে কেজি প্রতি ১০০ টাকার উপরে মুরগির কাটা মাংস বিক্রি হচ্ছিল, এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকার ঘরে। পাইকারি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বাজারে যেন বেগুন-টোম্যাটোর দরেই বিকোচ্ছে জ্যান্ত মুরগি। ‘বার্ড-ফ্লু’র সময়েও এমন ক্ষতির মুখ দেখতে হয়নি পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

বুধবার বেহালা থেকে বেলেঘাটা, গড়িয়া থেকে লেক মার্কেট— কলকাতার নানা প্রান্তের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল কেজি প্রতি বেগুনের দাম ৪০-৫০ টাকা। টোম্যাটোর দাম ৪০ টাকা। শশা ৩০ টাকা। অন্যান্য শাক-সব্জিও বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। সেখানে বিক্রেতারা সাধাসাধি করেও ক্রেতাদের মুরগি কেনাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অভিযোগ উঠছে, এই সুযোগে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারছেন পাঠার মাংসের বিক্রিতারা। মুরগির মাংসের সাত গুণ দাম নিচ্ছেন তাঁরা! ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির দাবি, “ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখ দেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কোথায় গিয়ে থামবে, কত কোটি টাকার ক্ষতি হবে এখনও বোঝা যাচ্ছে না।”

ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এ রাজ্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখ দেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ছবি: পিটিআই।

Advertisement

কী বলছেন ক্রেতা-বিক্রিতারা?

বেহালা সরসুনার সুপার মার্কেটে মুরগির মাংস বিক্রি করেন বাপি দাস। এ দিন তিনি বলেন, “হঠাৎ করে গুজব রটে গেল, মুরগির মাংস খেলে করোনাভাইরাস আক্রমণ করবে। সংগঠনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এমন কিছু হচ্ছে না। মানুষকে আমরাও বোঝাচ্ছি। কিন্ত কে কার কথা শোনে! তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বিক্রি। দোল-হোলির দিনেও তেমন বিক্রি হয়নি।”

এ দিন ওই বাজারেই সব্জি কিনছিলেন রাজা রায়। মুরগিতে করোনা-আতঙ্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে লোকের মুখে তো নানা রকম কথাবার্তা শুনছি। সব্জি, মাছের উপরেই এখন আছি। মুরগির ধারে কাছে যাচ্ছি না।”

সখেরবাজারের বাসিন্দা শান্তনু মজুমদারের অবশ্য মুরগি নিয়ে ছুঁৎমার্গ নেই। এ দিন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল করোনা-আতঙ্ক নিয়ে। তাঁর কথায়, “মিডিয়াতে তো দেখছি, করোনার সঙ্গে মুরগির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ফেসবুকে যে ভাবে বিষয়টি ছড়িয়েছে, তাতে আমার ঘরেও মুরগির মাংস ঢুকতে দিচ্ছেন না গিন্নি। গত রবিবার খাসির মাংস কিনেছি ৭০০ টাকায়!”

রাজ্যে মুরগির মাংসের চাহিদা

ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের তথ্য বলছে, করোনা-আতঙ্কের জেরে মুরগির মাংসের বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে রাজ্য জুড়ে ২ কোটি ৪০ লক্ষ কেজির আশপাশে মুরগির মাংস উৎপাদন হয়। রাজ্যে চাহিদা রয়েছে ২ কোটি কেজি-র আশপাশে। এখন বেশি পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে। বিদেশেও রফতানি করা হয়। রাজ্যে প্রায় ৫ লক্ষ পোল্ট্রি রয়েছে। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং নদিয়া জেলায় পোল্ট্রি রয়েছে সব চেয়ে বেশি। ২০ লক্ষ মানুষ সরাসরি পোল্ট্রি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। মুরগির মাংসের খুচরো বিক্রেতা ধরলে আরও ২০ লক্ষ মানুষের রুটিরুজি জড়িত। মদনমোহন মাইতির বক্তব্য, “৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। করোনা-আতঙ্ক রোখা না গেলে, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে হাজার কোটির কাছে।”

মুরগির মাংসের সঙ্গে কি করোনার যোগ রয়েছে?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নোভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে মুরগির মাংসের কোনও সম্পর্ক নেই। তেমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। উত্তর ২৪ পরগনার এক পোল্ট্রি মালিক রাধেশ্যাম রায়ের কথায়, “৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে বড় হয়ে যায় পোল্ট্রির মুরগি। এখন সব পোল্ট্রিতেই বিজ্ঞান সম্মতভাবে মুরগি উৎপাদন হয়। অ্যান্টিবায়োটিক বা দ্রুত বড় করার জন্যে ইঞ্জেকশন দিয়ে মুরগির শরীরে ওষুধ দেওয়ার যে খবর বাজারে চালু রয়েছে, তা কিন্তু ঠিক নয়। মুরগির রোগ হলে, তখনই মুরগিকে ওষুধ দেওয়া হয়। মানুষের রোগ হলেও, তো ওষুধ লাগে।” তিনি আরও বলেন, “যাঁরা মুরগি উৎপাদন করেন করেন, তাঁদের বাড়ির লোকও তো মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মুরগি চাষ না করলে, সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় আমাদেরই। মুরগি মারা গেলে, আমারাই ক্ষতিগ্রস্ত হই। তাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মুরগি পালন করা হয়।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement