বেহাল: খানাখন্দে ভরা সল্টলেকের উদয়াচল এলাকার রাস্তা। সোমবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
উন্নয়ন ভবনের পিছন দিকে গর্তে ভরা রাস্তায় এক বার জোর ঝাঁকুনি খেয়েছিল এক বিশিষ্ট আইনজীবীর গাড়ি। সেখানে এক অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে বিধাননগর পুরসভার এক বরিষ্ঠ পারিষদের সঙ্গে দেখা হয় সেই আইনজীবীর। তাঁকে ভাঙা রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনির কথা জানান তিনি। এর পরে খানিকটা ঠাট্টাচ্ছলেই ওই পারিষদের কাছে আইনজীবী জানতে চান, তিনি এখনও পুরসভার সঙ্গে জড়িত কি না। আইনজীবীর কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যান ওই ব্যক্তি।
শুধু ওই আইনজীবীই নন। সল্টলেকের খানাখন্দে ভরা রাস্তা নিয়ে সেখানকার বাসিন্দারা নাস্তানাবুদ তো বটেই, এই উপনগরীতে কর্মসূত্রে এবং আরও নানা কাজে যাঁরা যান, তাঁরাও রীতিমতো ক্ষুব্ধ। উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে বন্দর এলাকার ভাঙা রাস্তায় গাড়ির উপরে লরি উল্টে মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলর রামপিয়ারি রামের ছেলে রামকিঙ্কর রামের। সেই দুর্ঘটনার পরে সল্টলেকের রাস্তা নিয়েও আতঙ্কে ভুগছেন অনেকে। সেখানে বন্দর এলাকার মতো দৈত্যাকৃতি ট্রাক চলাচল করে না ঠিকই, কিন্তু সল্টলেক স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেট, উদয়াচল ভবন কিংবা দত্তাবাদের মতো রাস্তাগুলিতে পদে পদে যেন বিপদ লুকিয়ে রয়েছে। রবিবার দুপুরেই উদয়াচলের কাছে রাস্তা ভেঙে বেরিয়ে আসা পাথরে বাইকের চাকা পিছলে গিয়েছিল এক ডেলিভারি বয়ের। কোনওমতে রক্ষা পান তিনি।
বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘গত বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় বহু রাস্তা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সব রাস্তা সংস্কারের কাজ হবে। টেন্ডার-সহ প্রক্রিয়াগত কিছু কারণে সামগ্রিক পরিকল্পনায় একটু দেরি হয়েছে। পুজোর পরেই রাস্তা সারাইয়ের কাজে হাত দেওয়া হবে।’’
রাস্তা ভেঙেচুরে দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে পড়ার বিষয়টি নজরে রয়েছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগেরও। কোন কোন রাস্তা অবিলম্বে মেরামত করা প্রয়োজন, তার তালিকা পুলিশের তরফে বিধাননগর পুরসভায় পাঠানো হয়েছে। ট্র্যাফিক বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই ধরনের ভাঙা রাস্তা সব সময়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ। আমরা এমন রাস্তাগুলির তালিকা তৈরি করে পুরসভায় পাঠিয়েছি। কিছু কিছু রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরুও হয়েছে।’’
বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, পুজোর পরে সব রাস্তার আমূল সংস্কারের জন্য ১৭-১৮ কোটি টাকার টেন্ডার করা হচ্ছে। যে হেতু এখন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে, তাই বর্ষায় রাস্তায় পিচের কাজ করা সম্ভব নয়। পুরসভার পূর্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ অনিতা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ভাঙা রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, সেটা ঠিক। পুজোর মধ্যে আমরা ব্লকের ভিতরের রাস্তাগুলিতে জোড়াতাপ্পি দিয়ে সাময়িক সংস্কারের কাজ করব। পাশাপাশি, বড় রাস্তাগুলিতে থাকা গর্তও সারাই করা হবে।’’