Bibhutibhushan Bandyopadhyay

পুর-প্রকল্পের কাজে ভগ্নদশায় বিভূতিভূষণের ‘স্মারক ভবন’

বিভূতিভূষণের পুত্রবধূ মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুরসভা তাঁর বাড়ি সারিয়ে দেওয়া অথবা ক্ষতিপূরণের কথা বললেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩১
Share:

দুর্দশা: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভবনের এই অংশের বারান্দা প্রায় ভেঙে পড়ছে।

পথের পাঁচালীর পাণ্ডুলিপি এবং কালজয়ী এই উপন্যাসের প্রথম সংস্করণের মতো দুষ্প্রাপ্য বই আগেই নষ্ট হয়েছে। তার পরে একে একে নষ্ট হয়েছে আরণ্যকের স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহৃত পোশাক। ব্যারাকপুরে বিভূতিভূষণের পুত্রের বাড়িটির একাংশ প্রায় ভাঙতে বসেছে। অভিযোগ, ব্যারাকপুর পুরসভা একটি শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করছে ওই বাড়ির গা ঘেঁষে। তার জেরেই বাড়িটির ভগ্নপ্রায় দশা হয়েছে।

Advertisement

বিভূতিভূষণের পুত্রবধূ মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুরসভা তাঁর বাড়ি সারিয়ে দেওয়া অথবা ক্ষতিপূরণের কথা বললেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তাঁর বাড়ির একটি ঝুলবারান্দা কোনও রকমে খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার ব্যবস্থা পুরসভা করেছিল। বর্তমানে সেটি যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ তাঁকে দেওয়া হবে।

ব্যারাকপুর স্টেশনের উল্টো দিকে পুরসভার সভাঘর, সুকান্ত সদন। তার বিপরীতের একটি বাড়িতে বিভূতিভূষণের শ্বশুরমশাই ভাড়ায় থাকতেন। পথের পাঁচালীর অনেকটা অংশ লেখক সেই বাড়িতে বসেই লিখেছেন বলে দাবি মিত্রাদেবীর। পরবর্তীকালে মিত্রাদেবীরা সুকান্ত সদনের পিছনে বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়ির একটি অংশে স্মারক ভবন তৈরি করেছেন তাঁরা। সেখানে অপু-দুর্গার স্রষ্টার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং পাণ্ডুলিপি রাখা ছিল। তার মধ্যে অন্যতম পথের পাঁচালী। কালজয়ী এই উপন্যাসের প্রথম সংস্করণের একটি বই সেখানে রাখা হয়েছিল।

Advertisement

বাড়ির ভিতরে বহু দুষ্প্রাপ্য বই, নথি এবং বাদ্যযন্ত্র নষ্ট হতে বসেছে। রবিবার, ব্যারাকপুরে। ছবি: মাসুম আখতার

বছর দুয়েক আগে সুকান্ত সদন চত্বরে পুরসভা একটি বাণিজ্যিক ভবন তৈরির কাজ শুরু করে। গোল বাধে তার পরেই। মিত্রাদেবীর অভিযোগ, দু’টি বাড়ির মাঝে যতটা জায়গা ছেড়ে রাখার দরকার, এ ক্ষেত্রে ততটা ছাড়া হয়নি। কাজ শুরুর পরে প্রথমেই ভাঙা পড়ে তাঁদের বাড়ির পাঁচিলটি। তার পরে বন্ধ হয়ে যায় নিকাশি নালা। চিড় ধরে বাড়ির দেওয়ালে। দোতলার ঝুলবারান্দাটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। তার পরেই পুরসভার দ্বারস্থ হন মিত্রাদেবীরা।

তখনই পুরসভা চিঠি দিয়ে মিত্রাদেবীকে জানান, ওই নির্মাণ কাজের জন্য যদি তাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়, তা হলে তার মেরামতি অথবা ক্ষতিপূরণ দেবে পুরসভা। সেই আশাই করেছিলেন মিত্রাদেবীরা। কিন্তু বিপদ আসে বর্ষার সময়ে। নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত বছর বর্ষায় জল উঠোন ছাপিয়ে স্মারক ভবনে ঢুকে পড়ে। সেই জলেই নষ্ট হয় অপু-ট্রিলজির পাণ্ডুলিপি। একই সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায় আরও বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য নথি।

এই ঘটনার পরে বিভূতিভূষণের নাতি, বঙ্গবাসী কলেজের শিক্ষক তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকেও বিষয়টি জানান। তার মধ্যে বাড়ির বিভিন্ন দেওয়ালে চিড় ধরে। দোতলার একটি বারান্দা বসে যায়। মিত্রাদেবী জানান, বিষয়টি পুরসভাকে জানানোর পরে সেখানকার ইঞ্জিনিয়ারেরা তাঁদের বাড়ি দেখে যান। পরে ওই বারান্দার নীচে তিনটি লোহার খুঁটি বসানো হয়। মিত্রাদেবী বলেন, “স্মারক ভবনের মেঝে উঁচু করে মার্বেল পাথর বসানো হয়। তাতেও এ বার বর্ষায় জল ঠেকানো যায়নি। ওই ঘরে জল ঢুকে আরও অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়। তার মধ্যে লেখকের ব্যবহৃত পোশাক রয়েছে। এখন দোতলার বারান্দার যা অবস্থা, তাতে যে কোনও দিন সেটি ভেঙে পড়তে পারে। খুব ভয়ে দিন কাটছে আমাদের।”

ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান উত্তম দাস বলেন, “আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি ওঁর বাড়ি মেরামত করে দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণও পাবেন ওঁরা। সেই আশ্বাস থেকে সরছি না। তবে একটি উন্নয়নের কাজ চলছে। সেই কাজে এই ভাবে বাধা তৈরি করাটাও ঠিক নয়। কাজটা তো শেষ হোক আগে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement