Torture

প্রচার-পরিকাঠামো কোথায়, নির্যাতিতাদের জন্য সুরাহা কেন্দ্র থেকেও নেই এ রাজ্যে

যে কোনও নির্যাতনের ঘটনায় অনেক সময়েই পুলিশ বা কোর্ট-কাছারির পর্ব এড়িয়ে চলেন মহিলারা। অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হতে ভয় পান। বিশেষ ভাবে সক্ষম মহিলাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বৃহৎ।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৯
Share:

রাজ্যে খাতায়কলমে ২২টি সুরাহা কেন্দ্রের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

গার্হস্থ্য হিংসা থেকে অ্যাসিড হামলা, পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে যৌন নিগ্রহ— যে কোনও নির্যাতনের ঘটনায় অনেক সময়েই পুলিশ বা কোর্ট-কাছারির পর্ব এড়িয়ে চলেন মহিলারা। অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হতে ভয় পান। বিশেষ ভাবে সক্ষম মহিলাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বৃহৎ। সেই সব মহিলাদের ক্ষেত্রে আপৎকালীন সময়ে মুশকিল আসান হতে পারে হাসপাতালের চৌহদ্দিতে থাকা ‘এক ছাদের তলায় সমস্যা-সুরাহা কেন্দ্র’ (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার)। চিকিৎসা থেকে শুরু করে আইনি সাহায্য— সব দিক থেকেই পাশে দাঁড়ানোর কথা এই কেন্দ্রের।

Advertisement

মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই সুরাহা কেন্দ্র নিয়েই পশ্চিমবঙ্গ-সহ চার রাজ্যে সমীক্ষার কথা তুলে ধরল নির্যাতিতাদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শ্রুতি ডিজ়এবিলিটি রাইটস সেন্টার’। সম্প্রতি বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০টি সুরাহা কেন্দ্রে গিয়ে সমীক্ষা চালায় তারা। আর তাতেই উঠে এসেছে এ রাজ্যের ভয়াবহ অবস্থার কথা। কারণ সমীক্ষা বলছে, বাকি তিন রাজ্যে সুরাহা কেন্দ্র কিছুটা কাজ করলেও এ রাজ্যে এখনও এর নামও জানেন না অনেকে! এ রাজ্যে খাতায়কলমে ২২টি সুরাহা কেন্দ্রের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। ওই সংস্থার কর্ণধার শম্পা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য নির্দিষ্ট দু’টি সুরাহা কেন্দ্র— বিজয়গড় স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও বারাসত জেলা হাসপাতালে আমরা সমীক্ষা করতে গিয়েছিলাম। বিজয়গড়ের হাসপাতালটিতে কোনও পরিষেবাই মেলে না। আর বারাসত জেলা হাসপাতালে মাত্র এক জন কর্মী রয়েছেন। একটি কিউবিকলকেই সেখানে সুরাহা কেন্দ্র বলে দেখানো হয়। দু’জায়গাতেই কর্মী-সঙ্কট প্রকট, তাই নির্যাতিতাকে সরাসরি সেখানে না এনে ফোনে পরামর্শ দেওয়ার উপরেই জোর দেওয়া হয়।’’

তবে বাকি তিন রাজ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত, জনমানসে সচেতনতাও আছে। আর নির্যাতিতা বিশেষ ভাবে সক্ষম হলে? শম্পা জানান, লখনউয়ের সুরাহা কেন্দ্রকে মডেল ধরা হলেও সেখানেও নেই বিশেষ ভাবে সক্ষম মেয়েদের জন্য কোনও ব্যবস্থা।

Advertisement

আইনজীবী ঝুমা সেন জানান, ২০০১ সালে মুম্বইয়ের কে বি বান্দ্রা হাসপাতালে নির্যাতিতাদের পাশে থাকতে প্রথম শুরু হয়েছিল ‘চাহাত’ (সেন্টার ফর এনকোয়ারি ইনটু হেলথ অ্যান্ড অ্যালায়েড থিমস)। এর সাফল্যের ফলে কয়েকটি রাজ্যে ভিন্ন নামে শুরু হয়েছিল এমন কেন্দ্র। দিল্লি গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে, ২০১৩-১৪ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক শুরু করে সুরাহা কেন্দ্র। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, সচেতনতা ও সরকারি সদিচ্ছার অভাবে এ রাজ্যে বিপদে এই কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়া তো দূর, নামই শোনেননি অনেকে! পরিকাঠামোও কার্যত নেই।

সমীক্ষার হাল হকিকত

বিহারে মোট ৩৮টি, ঝাড়খণ্ডে ২৪টি, উত্তরপ্রদেশে ৭৫টি ও পশ্চিমবঙ্গে মোট ২২টি সুরাহা কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে বাছাই ১০টি কেন্দ্রে চলেছে সমীক্ষা।

সব সুরাহা কেন্দ্র হাসপাতালে তৈরি নয়।

২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার কথা থাকলেও কিছু কেন্দ্র সকাল ৯-৫টা খোলা থাকে।

কোনও কেন্দ্রেই মনোবিদ বা আইন বিশেষজ্ঞ নেই। নেই বিশেষ ভাবে সক্ষম নির্যাতিতার জন্য ব্যবস্থাও।

তথ্য: জাতীয় মহিলা কমিশন, শ্রুতি ডিজ়এবিলিটি রাইটস সেন্টার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement