রবীন্দ্র সরোবর, এসএসকেএম চত্বরে দূষণ ভয়াবহ, জানাচ্ছে সমীক্ষা

কলকাতার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) বার্ষিক গড় স্বাভাবিকের প্রায় দ্বিগুণ। বাতাসে ভাসমান সুক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫)র পরিমাণও স্বাভাবিকের থেকে বেশি। পরিবেশবিদেরা বলছেন, স্বাস্থ্যের জন্য এই সুক্ষ্ম ধূলিকণা আরও মারাত্মক। কারণ, এগুলি সরাসরি ফুসফুসে ঢুকে পড়ে। হাওড়ার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, গত তিন বছর ধরে সেখানে ভাসমান ধূলিকণা এবং সুক্ষ্ম ধূলিকণার গড় পরিমাণ স্বাভাবিকের অনেকটাই উপরে রয়েছে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ১৭:৪৬
Share:

স্বাস্থ্যরক্ষায় সকালে রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে হাঁটতে যান অনেকেই। কিন্তু জানেন কি, সেখানে হাওয়ায় দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি! স্বাস্থ্য পরিষেবায় এ রাজ্যের সব থেকে উন্নত সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম। সেই হাসপাতাল চত্বরে দূষণের মাত্রা মাপতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় পরিবেশবিদদের!

Advertisement

শহরের এমন দুই স্বাস্থ্যরক্ষার জায়গার দূষণের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করেছে দিল্লির পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)। তারা বলছে, বায়ুদূষণে ক্রমশই বিপন্ন হচ্ছে মহানগরের মানুষের ফুসফুস। এ বার কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়ে কলকাতার বায়ু বিষাক্ত হয়ে ওঠার সেই তথ্যকে কার্যত মেনে নিল বিশেষজ্ঞ কমিটিও। কমিটি সূত্রের খবর, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদর দফতর পরিবেশ ভবনের সামনেও দূষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি।

আরও পড়ুন- জীবনযাত্রার ধরনেও লুকিয়ে কিডনির বিপদ​।

Advertisement

এই দূষণ ঠেকাতে কমিটি কিছু দাওয়াইয়েরও সুপারিশ করেছে। তবে তা কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে।

কলকাতা ও হাওড়া যে দেশের দূষণ মানচিত্রের প্রথম সারিতে তা আগেই জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। আশঙ্কা করেছিল এ শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়েও। সেই পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ নিয়েই কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলাতেই পরিবেশ সচিবকে মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত।

সেই কমিটির দায়ের করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কলকাতার বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) বার্ষিক গড় স্বাভাবিকের প্রায় দ্বিগুণ। বাতাসে ভাসমান সুক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫)র পরিমাণও স্বাভাবিকের থেকে বেশি। পরিবেশবিদেরা বলছেন, স্বাস্থ্যের জন্য এই সুক্ষ্ম ধূলিকণা আরও মারাত্মক। কারণ, এগুলি সরাসরি ফুসফুসে ঢুকে পড়ে। হাওড়ার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, গত তিন বছর ধরে সেখানে ভাসমান ধূলিকণা এবং সুক্ষ্ম ধূলিকণার গড় পরিমাণ স্বাভাবিকের অনেকটাই উপরে রয়েছে।

পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, কমিটির রিপোর্টে কিছু দাওয়াই রয়েছে।

যেমন বলা হয়েছে—

· কলকাতা ও হাওড়ায় ভাসমান সুক্ষ্ম ধূলিকণার উপরে নজরদারি বাড়াতে হবে।

· গাড়ির পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে কড়া হতে হবে।

· নো-পার্কিং রুল কড়াকড়ি করতে হবে।

· ভূগর্ভস্থ পার্কিং বাড়াতে হবে।

· সাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

· ঘন পাতা রয়েছে এমন গাছ লাগাতে হবে।

· বেশি করে আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে।

· রাস্তায় নিয়মিত জল ছেটাতে হবে।

· খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।

· ই-রিক্সা বাড়াতে হবে।

· দূষণ রুখতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

যদিও এই দাওয়াই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে। সুভাষবাবু বলছেন, কলকাতায় দূষণের পিছনে রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। সেগুলিতে নজরদারি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। নির্মাণস্থল থেকে হওয়া কংক্রিট দূষণ নিয়েও কোনও উচ্চবাচ্য নেই। সিএসই-র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ) অনুমিতা রায়চৌধুরী জানান, কলকাতা ডিজেলচালিত গাড়ির রাজধানী। ৯৯ শতাংশ পণ্যবাহী গাড়ি ডিজেলচালিত। ‘‘কিন্তু ডিজেলচালিত গাড়ির ব্যবহার নিয়ে কমিটির রিপোর্টে কার্যত কিছুই বলা নেই,’’ মন্তব্য পর্ষদের এক অফিসারের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement