মিশকালো: জলশোধন প্লান্টের কর্মীদের কর্মবিরতির জেরে দূষিত হয়েছে চর্মনগরী এলাকার খাল। সোমবার, বানতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
বানতলা চর্মনগরীর জলশোধনপ্লান্টের শ্রমিকদের কর্মবিরতির জেরে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে এলাকায়। ওই জলশোধন প্লান্টের ১৮০ জন কর্মী প্রায় দেড় মাস ধরে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। অভিযোগ, ফলে চর্মনগরীর দূষিত জল আশপাশের গ্রামগুলিতে ঢুকে পড়েছে। রাসায়নিক মিশ্রিত সেই দুর্গন্ধময় জলে টেকা দুষ্কর স্থানীয়দের। এলাকায় বসবাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বানতলা চর্মনগরীতে শ্রমিক অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। অভিযোগ, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের কাছে বার বার বেতন বাড়ানোর দাবি করাহলেও তারা কর্ণপাত করেনি। উল্টে ৭ এপ্রিল ওই প্লান্টের চার কর্মীকে সাসপেন্ড করা হলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। শ্রমিক সংগঠনের নেতা রাকেশ রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘৭ এপ্রিল চার কর্মী কাজে গেলে মদ্যপানের মিথ্যা কারণ দেখিয়ে তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়। এরই প্রতিবাদে প্রায় ২০০ কর্মীকর্মবিরতির ডাক দেন। মাঝে একবার মিটমাট হয়ে গেলেও ফের ওই চার জনকে কাজে যোগ দিতে না দেওয়ায় কর্মীরা লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন।’’
অভিযোগ, শ্রমিকদের কর্মবিরতির জেরে চর্মনগরীর প্লান্টের কাজ বন্ধ। ফলে দূষণ ছড়াচ্ছে আশপাশের গ্রামে। সোমবার আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেল, চর্ম কারখানার দূষিত জলের দুর্গন্ধে টেকা দায়। অভিযোগ, বেদেরআটি, গঙ্গাপুর, ঊষপাড়া, সোনাটিকারি, কড়াইডাঙা, মৌশল, কাকুরিয়া, মাকালতলার মতো গ্রামগুলিতেদূষিত জল ঢুকে পড়ছে। রাকেশ জানান, ওই দূষিত জল খেয়ে ইতিমধ্যেই দু’টি গরু মারা গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে এলাকার দূষণ চরমে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় ক্যানিং (পূর্ব) বিধানসভার বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘শ্রমিকদের পাশে আছি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বঞ্চিত হওয়ায় আন্দোলন করছেন। সমস্যার সমাধানে শীঘ্রই উভয় পক্ষকে নিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’
তবে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জিয়া নাফিসের অভিযোগ, ‘‘শ্রমিক নেতা রাকেশের ইন্ধনে বহিরাগতেরা এসে শ্রমিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কর্মবিরতি করছে। এর পুরো দায় শ্রমিকদেরই। ওঁরা কাজ শুরু করলেই সমস্যা মিটে যাবে।’’ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ইমরান আহমেদ খান রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খানের ছেলে। বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘ইমরানের জন্যই শ্রমিক-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত।’’ ইমরানকে একাধিক বার ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। টেক্সট মেসেজের জবাব মেলেনি।
এ দিকে, ওই এলাকায় একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার দফতর রয়েছে। তাই এ ভাবে চর্মনগরীর মূল প্রবেশপথের সামনে শ্রমিকদের লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি চলতে থাকলে রাজ্যের ‘শিল্পবান্ধব’ ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।