Pollution

অন্যতম দূষিত আদিগঙ্গা নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি

এই মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। মামলায় সাহায্যের জন্য তাঁকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কার দিতে কলকাতা পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫০
Share:

আদিগঙ্গার জলে জমে আছে আবর্জনা। ফাইল চিত্র

দেশের ৩৫১টি সব থেকে দূষিত নদীর শাখার মধ্যে আদিগঙ্গা অন্যতম। সেই আদিগঙ্গার সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনের চেষ্টায় কোনও খামতি থাকলে চলবে না। রাজ্য পরিবেশ দফতর, সেচ দফতর, কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। তার জন্য আদিগঙ্গার দু’পাড়ে যত বেআইনি দখলদার রয়েছে, তাদের সরানো প্রয়োজন। আগামী ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর (কলকাতা বন্দর) কর্তৃপক্ষের জমি পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় কি না, তা আলোচনার মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে ঠিক করতে হবে। আদিগঙ্গার দূষণ মামলায় এমনই রায় দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। এই রায়ের মাধ্যমে গত পাঁচ বছর ধরে চলা মামলার নিষ্পত্তিও করে দিল আদালত।

Advertisement

এই মামলায় কখনও বেআইনি দখলদার, কখনও নিকাশি পরিশোধন প্লান্টের জমি নিয়ে সমস্যা, কখনও আদিগঙ্গার উপরে মেট্রো রেলের স্তম্ভের জন্য আবর্জনা সাফাইয়ে অসুবিধা হওয়া-সহ একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। এ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবেশ আদালতের তরফে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আদিগঙ্গা রয়ে গিয়েছে আদিগঙ্গাতেই! ২৯ পৃষ্ঠার রায়ে সেই সব বিষয়েরই উল্লেখ করেছে আদালত। কলকাতা পুরসভাকে তিনটি নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট তৈরির কাজ দ্রুত করতে বলার পাশাপাশি স্তম্ভ ও ‘এলিভেটেড’ স্টেশন নির্মাণের কারণে আদিগঙ্গায় জমা বর্জ্য এবং তা পরিষ্কারে অসুবিধা হওয়ার কারণে প্রয়োজনে মেট্রো রেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তবে আদিগঙ্গার সংস্কারের কাজে গতি আনার জন্য আদালত একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য পরিবেশ দফতর, সেচ দফতর, কলকাতা পুরসভা, টালি নালা প্রকল্প, কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষ কর্তারা সেটির সদস্য হবেন। বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য ‘নোডাল’ সংস্থা হিসেবে কাজ করবে কলকাতা পুরসভা। রাজ্যের মুখ্যসচিব ওই কমিটির কাজের তদারকি করবেন।

Advertisement

আদিগঙ্গাকে আবর্জনামুক্ত করার পাশাপাশি তাতে যে নিকাশি নালাগুলি পড়ছে, তাদের অভিমুখ পরিবর্তনের বিষয়টি দেখার জন্য পর্ষদকে কড়া নজরদারি করার কথা বলা হয়েছে। আদিগঙ্গা দূষিত করছে, এমন কারও বিরুদ্ধে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ-সহ কড়া পদক্ষেপ করার ক্ষমতাও পর্ষদকে দিয়েছে আদালত।

এ ছাড়াও, আদিগঙ্গা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থ নিয়েও সমস্যা হয়েছিল। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ (এনএমজিসি) কর্তৃপক্ষ সংস্কারের টাকা দিচ্ছেন না। পরিবর্তে তাঁরা দখলদার সরানো, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক ভাবে কাজ করা, নালার ধারে ‘ফেন্সিং’ করা-সহ নানা শর্ত দিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনএমজিসি আবার জানায়, তাদের তরফে কোনও শর্তই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র এলাকাভিত্তিক ও ভৌগোলিক যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে, সেগুলির কী ভাবে সমাধান হবে, তা রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ, প্রকল্পের সাফল্যের জন্য তা অপরিহার্য। সংশ্লিষ্ট রায়ে এই বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে। আদিগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে এবং তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থ কী ভাবে দেওয়া যায়, তার সম্ভাব্য পথগুলি এনএমজিসি-কে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

এই মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। মামলায় সাহায্যের জন্য তাঁকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কার দিতে কলকাতা পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘পুরস্কারটা বড় নয়। আদি গঙ্গা নিয়ে এত দিনের লড়াইয়ের যে স্বীকৃতিটুকু আদালত আমায় দিয়েছে, সেটাই অনেক। তবে যত দিন না আদিগঙ্গার সংস্কার হচ্ছে, তত দিন এই কাজ থামবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement