নিষেধ: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ‘নো হর্ন জ়োন’। নিজস্ব চিত্র
গত দুই-তিন বছরের তুলনায় গত তিন মাসেই অকারণে হর্ন বাজানোয় মামলা হয়েছে প্রায় তিন গুণ বেশি। চলছে লাগাতার প্রচার অভিযানও। তবু এখনই মুম্বই পুলিশের মতো ‘পানিশিং সিগন্যাল’ ব্যবস্থা চালু করতে চায় না কলকাতা পুলিশ। বরং শব্দ-দূষণের পুরনো রোগ সারাতে ‘হর্ন প্রবণ এলাকা’ চিহ্নিত করে অভিযান চালাতে চায় লালবাজার। সম্প্রতি শহরের ‘নো হর্ন জ়োন’ এ হর্ন বাজানো ঠেকাতে দিনে দু’ঘণ্টা করে অভিযান চালানো শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ।
এ জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতার বেশ কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। গত কয়েক বছরে অকারণ হর্ন বাজানোয় হওয়া মামলার খতিয়ান দেখেই শ্যামবাজার মোড়, হাতিবাগান, বেলেঘাটা মোড়, কলেজ স্ট্রিট মোড়, হাজরা মোড় এবং সেই সংলগ্ন এলাকা ও কসবা কানেক্টরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে ই এম বাইপাস ও উল্টোডাঙা মোড়। ২০১৬ সালে শব্দমুক্ত এলাকায় হর্ন বাজানোর জন্য মামলা হয় ১৫৯০২টি ও অকারণ হর্ন বাজানোর জন্য ৬০৭৪টি। ২০১৭ ও ’১৮ সালে তেমনই মামলা হয়েছে যথাক্রমে ৩৩৯০৭টি ও ১৪৮৯৫টি এবং ২৯২৮৩টি ও ১১০০৮টি। গত তিন মাসেই সেখানে অকারণ হর্ন বাজানোয় মামলা হয়েছে ৫৫ হাজার ১৩৫টি। দিনের কোন সময়ে কোথায় কী রকম হর্নের দৌরাত্ম্য চলে তার পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে শ্যামবাজার এবং তার আশপাশের এলাকায় দিনের শুরুতে সব চেয়ে বেশি হর্নের দৌরাত্ম্য চলেছে গত তিন মাসে। রাতে তেমনই হর্নের মাত্রা বাড়ে মা উড়ালপুল ও পার্ক সার্কাস সংলগ্ন এলাকায়। তবে দিনভর প্রায় একই হর্ন-যন্ত্রণা পোহাতে হয় ই এম বাইপাস ও সায়েন্স সিটি সংলগ্ন এলাকায়।
এমনই হর্ন-যন্ত্রণা রোধে নিজেদের শহরকে ‘হঙ্কিং ক্যাপিটাল’ দাবি করে সম্প্রতি একটি নতুন পদক্ষেপ করেছে মুম্বই পুলিশ। একটি ভিডিয়ো বার্তায় তারা জানিয়েছে, ওই শহরের নিঃশব্দ এলাকাগুলিতে তো বটেই, ট্র্যাফিক সিগন্যাল লাল রয়েছে দেখেও অনেকে অকারণে হর্ন বাজান। জরিমানা করেও এই প্রবণতা রোখা যায় না। ফলে নয়া দাওয়াই হিসেবে ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলিতে শব্দ মাপার যন্ত্র বসাচ্ছে পুলিশ। সিগন্যালের কাছে হর্নের আওয়াজ ৮৫ ডেসিবেলের সীমা পার করলেই জানান দেবে সেই যন্ত্র। তার পরেই আরও ৯০ সেকেন্ডের জন্য লাল হয়ে যাবে সিগন্যাল। অতএব ‘যদি সিগন্যালেই দাঁড়িয়ে থাকতে চাও, নিশ্চিন্তে হর্ন বাজাও!’
আরও পড়ুন: সিগন্যালে দাঁড়িয়ে হর্ন বাজালে এবার থেকে আরও বেশি অপেক্ষা করতে হবে!
মুম্বইয়ের এই ব্যবস্থা কলকাতায় চালু করার পক্ষে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, পুরনো কায়দায় স্রেফ সচেতনতা অভিযান করে বা ১০০ টাকা জরিমানা নিলে হর্ন বাজানোর প্রবণতা আটকানো যাবে না। কলকাতা পুলিশ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, এখনই তারা মুম্বইয়ের পথে হাঁটতে নারাজ। এখনই এ ব্যবস্থা চালু করার কিছু সমস্যাও রয়েছে বলে তাদের দাবি। লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘যে কোনও শহরের নিজস্ব চরিত্র থাকে। সেই মতো ব্যবস্থা করতে হয়। এখানকার প্রায় সব রাস্তাই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এখানে মুম্বইয়ের মতো অত সংখ্যায় রিং রোড নেই। তাই শাস্তি হিসেবে কোনও সিগন্যাল বাড়তি সময় লাল করে রেখে দিলে, শহরের অন্য প্রান্তে অকারণ যানজট হবে।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক (দক্ষিণ) অরিজিৎ সিংহ যিনি দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পুলিশি ব্যাপার দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মানুষকে সতর্ক করা ছাড়া অন্য কোনও ভাবেই এ জিনিস রোখা সম্ভব নয়। অকারণ হর্ন বাজানো রুখতে গত তিন মাস ধরেই নয়, লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে।’’
আর এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কেউ হর্ন বাজিয়ে ৮৫ ডেসিবেল মাত্রা পার করে দিলেই যদি সিগন্যাল লাল করে দেওয়া হয়, তা হলে ওই সিগন্যালেই দাঁড়ানো যে ব্যক্তি অকারণে হর্ন বাজালেন না তাঁকেও তো ভুগতে হল! এটা কি করা যায়?’’