দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই স্কুলবাস। ফাইল চিত্র
ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকা স্কুলবাস ও ছোট গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পুলিশ। মঙ্গলবার এমনটাই জানান পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘উপযুক্ত ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া রাস্তায় নামা বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। একই সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে ট্র্যাফিক প্রশিক্ষণ স্কুলে স্কুলগাড়ি, স্কুলবাস ও বাসের চালকদের প্রশিক্ষণ শিবির করা হবে।’’ তিনি আরও জানান, স্কুলগাড়ি এবং বাসের ফিটনেস পরীক্ষা নিয়মিত করাতে পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থ হবে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই সোমবার সকালে দুর্ঘটনায় পড়েছিল পড়ুয়াভর্তি স্কুলবাস। তা ছাড়া ওই দুর্ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা জানতে স্কুলবাসটির প্রযুক্তি সংক্রান্ত পরীক্ষাও করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, আজ, বুধবার ওই বাসের ফরেন্সিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। তা থেকেও দুর্ঘটনার কারণ জানা যেতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই রাস্তায় যাত্রী পরিবহণ করছিল। বাসটির মালিককে দুর্ঘটনার পরেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল চিৎপুর থানায়। কিন্তু তিনি সে দিন থানায় হাজির হননি। ফের মঙ্গলবার তাঁকে তলব করা হলেও তিনি থানায় যাননি বলেই খবর। তবে জখম বাসের চালক তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনি বাসটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন রাস্তার পাশে থাকা বালিতে বাসের চাকা তুলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু তা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাসটি সোজা স্তম্ভে আঘাত করে উল্টে যায়।
চিৎপুর লকগেট উড়ালপুলের কাছে সোমবার সকালের ওই ঘটনায় জখম হয় হেদুয়ার হোলি চাইল্ড স্কুলের ১৪ জন ছাত্রী। সঙ্গে জখম হন ছ’জন অভিভাবকও। গুরুতর জখম অবস্থায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি বাসের চালক সোনু হালদারও। এ দিন সোনুর পাড়া গৌরীবাড়ি এলাকায় গেলে তাঁর মা সোনালীদেবী বলেন, ‘‘ছেলে এখন একটু ভাল আছে।’’ সোনুর প্রতিবেশীরা জানান, তিনি সম্প্রতি স্কুলগাড়ি চালাচ্ছেন। তার আগে ছোট মালবাহী লরি ও ভ্যান চালাতেন।
এ দিকে পুলিশ ওই বাসের বিস্তারিত তথ্য পরিবহণ দফতরের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে। কারণ অনলাইনের নথি অনুযায়ী দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুলবাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুলাইয়ে। গাড়ি থেকে বাসের কোনও নথি মেলেনি। পুলিশের দাবি, সেটি থাকার কথা মালিকের কাছে। কিন্তু তিনি না আসায় পরিবহণ দফতরের কাছে নথি চাওয়া হয়েছে।
হোলি চাইল্ড হেদুয়ার প্রিন্সিপাল সিস্টার রোশনী বলেন, ‘‘যারা আহত হয়েছে, তাদের অনেকের সে দিন প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষাগুলো ১৮ তারিখের থিওরি পরীক্ষার পরে নেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত আহত ছাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ওদের পাশে রয়েছি।’’
সোমবারের ঘটনায় আহত ছাত্রীদের কয়েক জন এ দিন জানায়, সামনের সোমবার থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। কিন্তু এখনও দুর্ঘটনার আতঙ্ক তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের অনেকের কাউন্সেলিং দরকার বলে মনে করছেন কয়েক জন আহত ছাত্রীর অভিভাবক। সপ্তম শ্রেণির আহত ছাত্রী তিথি চট্টোপাধ্যায়ের মা মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে মেয়ে সোমবার সারা রাত ভয়ে ঘুমোতে পারেনি। মাঝেমধ্যেই কেঁপে কেঁপে উঠছে। কেঁদে উঠছে। এখনও এতটাই আতঙ্ক কাজ করছে ওর মধ্যে। বারবার বলছে আর কোনও দিন স্কুলবাসে উঠবে না। এ ছাড়া দুর্ঘটনার জন্য মাথার যন্ত্রণা-সহ নানা শারীরিক যন্ত্রণা তো রয়েছেই। সামনেই ওর পরীক্ষা। এই অবস্থায় কী ভাবে পরীক্ষা দেবে কে জানে।’’ আর এক আহত ছাত্রী শ্রেয়সী সেনগুপ্তের মা ঝুমা সেনগুপ্তও বলেন, ‘‘ওর ডান দিকের গাল এখনও ফুলে রয়েছে। সেই সঙ্গে ওকে দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’’