সুনসান: কলকাতার বুকে এ যেন বাতাসিয়া লুপ। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য এমন চেহারাতেই দেখা গেল ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলকে। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল তিন দিন বন্ধ থাকলে যানজট হবে বলে আশঙ্কা ছিল। কাজ শুরুর প্রথম দিন ভুগতে না হওয়ায় পুলিশকেই ‘বাহবা’ দিচ্ছে আমজনতা। তবে, শনিবার অধিকাংশ অফিস ছুটি থাকায় তেমন যানজট না হলেও সোমবারই পুলিশের আসল পরীক্ষা বলে মনে করছেন সকলে।
এই তিন দিন গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শনিবার থেকে কলকাতা পুলিশ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করে। যার মধ্যে অন্যতম বড়বাজার তল্লাটে গাড়ি পার্কিং বন্ধ রাখা। পুলিশ জানায়, যে সব রাস্তায় তিন দিনের জন্য গাড়ি পার্কিং সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে, সেগুলি হল স্ট্র্যান্ড রোড (অকল্যান্ড রোড থেকে ক্যানিং স্ট্রিট), ফেয়ারলি প্লেস (দু’দিকই), নেতাজি সুভাষ রোড (ফেয়ারলি প্লেস থেকে ক্যানিং স্ট্রিট), ইন্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেস (ব্রেবোর্ন রোড থেকে রবীন্দ্র সরণি), ক্যানিং স্ট্রিট (স্ট্র্যান্ড রোড থেকে ওল্ড চিনাবাজার স্ট্রিট), ক্লাইভ ঘাট স্ট্রিট, এম জি রোড, স্ট্র্যান্ড রোড (কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোড থেকে ক্যানিং স্ট্রিট ও রাজাকাটরা), স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড, এন এস রোড, ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের নীচের পার্কিং প্লট, এম জি রোড, মিরবাহার ঘাট স্ট্রিট, পগেয়া পট্টি, রতন সরকার গার্ডেন লেন, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট ও বিবেকানন্দ রোড (মালোপাড়া মোড় থেকে গিরিশ পার্ক ক্রসিং), রবীন্দ্র সরণি (জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে ডি সি ব্যানার্জি রোড মোড়), এম জি রোড (চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ মোড় থেকে যদুনাথ মল্লিক স্ট্রিট ক্রসিং) এবং যদুলাল মল্লিক স্ট্রিট (নিমতলা ঘাট ক্রসিং থেকে মালোপাড়া ক্রসিং)। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বড়বাজার তল্লাটের একাধিক রাস্তায় পার্কিং বন্ধ থাকায় এ দিন গাড়ি চলাচলে কোনও সমস্যা হয়নি।’’
পাশাপাশি, উড়ালপুলের নীচে রাস্তার পাশে কোনও হকারকেও শনিবার বসতে দেওয়া হয়নি। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এ দিন স্ট্র্যান্ড রোড ও ব্রেবোর্ন রোডে প্রচুর পুলিশকর্মী ছিলেন। ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল বন্ধ থাকলেও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষত, বছরের অন্যান্য দিনে ক্যানিং স্ট্রিটে যেখানে পা রাখাই দায় হয়, সেখানে শনিবার সকালে হাওড়া থেকে আসা ছোট গাড়িকে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে ক্যানিং স্ট্রিটের মধ্য দিয়ে ব্রেবোর্ন রোডে পাঠানো হয়। ক্যানিং স্ট্রিটে ছোট গাড়ি চলাচলের পাশাপাশি পথচারীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তার একপাশে গার্ডরেল তৈরি করা হয়।
স্ট্র্যান্ড রোড ও ব্রেবোর্ন রোডে যানজট হওয়ার অন্যতম কারণ রাস্তার উপরে ধীর গতির যানবাহনের (মালবাহী ভ্যান) অবাধ যাতায়াত। শনিবার সকাল থেকে এলাকায় ধীর গতির যান চলাচলেও রাশ টেনেছিল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়া থেকে ছাড়া ছোট গাড়িগুলি ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। বিশেষত, শনিবার দক্ষিণ কলকাতামুখী ছোট গাড়ি ও ট্যাক্সিকে বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ায় হাওড়া ব্রিজের উপরে চাপ অনেক কম ছিল। এ দিন সকাল থেকে স্ট্র্যান্ড রোডে উত্তর কলকাতামুখী সমস্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলও বন্ধ রাখা হয়।
মাসের দ্বিতীয় শনিবার বহু অফিস বন্ধ থাকায় এ দিন পুলিশ প্রশংসা কুড়োলেও সোমবারটাই পাখির চোখ হিসেবে দেখছে লালবাজার।