—প্রতীকী চিত্র।
বাড়ি বা ফ্ল্যাট ফাঁকা রেখে ঠাকুর দেখতে কিংবা বাইরে খেতে যাবেন না। অষ্টমীর সকালে অঞ্জলি দিতেও সকলে এক সঙ্গে মণ্ডপে যাবেন না। দফায় দফায় যান। সব সময়ে বাড়িতে কেউ না কেউ থাকুন। বেশি নগদ এবং বেশি পরিমাণে দামি সোনা-হিরের গয়না বাড়িতে না রাখাই ভাল। মাথায় রাখুন, পুলিশেরা কিন্তু এই সময়ে মণ্ডপ এবং রাস্তাতেই ব্যস্ত থাকেন।
আসন্ন উৎসবের মরসুমে চুরি ঠেকাতে নাগরিকদের কী করা প্রয়োজন এবং কী না করা দরকার, এমন ১৩ দফা পরামর্শ সম্বলিত প্রচারপত্র শহর জুড়ে বিলি করতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। শুধু পুজো বা উৎসবের মরসুমের কথা মাথায় রেখে চুরি ও চোর ঠেকাতে এমন সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ এ বছরই প্রথম দিচ্ছে লালবাজার।
আসলে বিপদ বড় বালাই। সদ্য নিউ আলিপুরে চুরি করতে বাড়িতে ঢোকা দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছেন এক বৃদ্ধ। তার আগে জুন মাসে নেতাজিনগরে এক বৃদ্ধা খুন হন চোরদেরই হাতে। শুক্রবার আলিপুর আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে দু’জনকে, যারা আট বছর আগে কালীঘাটের একটি বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে গৃহকর্ত্রীকে খুন করেছিল। ২০১২-র অগস্টে চোরদের হাতেই খুন হন চিৎপুরের এক বৃদ্ধা। সেই জন্য পুলিশ যথেষ্ট উদ্বেগে।
তা ছাড়া, গোয়েন্দা সূত্রের খবর, দক্ষিণ ভারত থেকে চোর ও কেপমারদের বেশ কয়েকটি দল ইতিমধ্যেই কলকাতায় ঢুকে পড়েছে। আগামী রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। ১৯ তারিখ মহালয়া।
এমন উৎসবের সময়ে অধিকাংশ মানুষের দৈনন্দিন রুটিনের কথা মাথায় রেখে চুরি ও চোর ঠেকাতে কী করণীয় ও কী করণীয় নয়, তার তালিকা দিয়ে লিফলেট তৈরি করেছে লালবাজার। যার শেষ দু’টি হলো, সম্ভব হলে বা সামর্থয় কুলোলে বাড়ি ও আশপাশে ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরা বসান। সঙ্গে বাড়িতে লাগান বার্গলার অ্যালার্ম বা চোর-ঘণ্টি।
লালবাজারের কর্তাদের বক্তব্য, চুরির সময়ে বাড়ির লোক জেগে যাওয়ায় চোরদের হাতে তাঁদের পরপর খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার উৎসবের মরসুমে শুধু চুরি ঠেকানো নয়, চোরকে ঘেঁষতে না দেওয়াও লক্ষ্য। সে কথা মাথায় রেখে সতর্ক হতে হবে। তাই বাড়ির জানলার গ্রিল মোটা পাত দিয়ে তৈরি করে সেটা শক্তপোক্ত ভাবে দেওয়ালের সঙ্গে আটকাতে হবে। ঝট করে যাতে খোলা না যায়। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তার মতে, নিউ আলিপুরের ওই বাড়িতে জানলায় তারের জালের বদলে গ্রিল থাকলে চোরেরা হয়তো সহজে ঢুকতে পারত না। আগেও ওই দুই দুষ্কৃতী সেখানে রেকি করে গিয়েছিল, বাড়িতে ঢুকে লোহা-লক্কড় নিয়ে গিয়েছিল। সিসি ক্যামেরা থাকলে সেটা ধরা পড়ত।
ওই অফিসারের বক্তব্য, চোরেরা যে কোনও প্রকারে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করবে। এর পাল্টা হিসেবে গৃহস্থের সতর্কতা এমন থাকতে হবে, যাতে সহজে চোর না ঢুকতে পারে। তার পরেও চোর বাড়িতে ঢোকার জন্য কসরত করার সময়ে গৃহস্থ নিজে না পেলেও পড়শিরা যাতে টের পান এবং জেগে যান, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গৃহস্থকে পুলিশের পরামর্শ, দুর্গাপুজো, কালীপুজোর আগে অনেকে বাড়ি, আসবাব ঝাড়পোছ করাতে দু’-তিন দিনের জন্য কাজের লোক রাখেন। এরা মূলত ভিন্ রাজ্যের। এদের একাংশ সুযোগ বুঝে নগদ ও গয়না হাতিয়ে নিয়ে পালায়। তাই কাজে রাখার আগে এদের নাম, ঠিকানা, ছবি, ফোন নম্বর স্থানীয় থানায় জমা করুন। এই ধরনের অপরাধ নিউ আলিপুর, আলিপুর, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, বড়বাজার, পোস্তা ও লেক এলাকায় বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।