ভাবনায় পুজো

বন্ধ বিবেকানন্দ রোডের বিকল্প খুঁজতে মরিয়া পুলিশ

উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ এমনিতেই বিশ বাঁও জলে। ভাঙা উড়ালপুলের তলার রাস্তা নিয়েও ফাঁপড়ে পড়েছে লালবাজার। পুলিশ সূত্র বলছে, হাওড়া স্টেশন থেকে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে পোস্তা, গণেশ টকিজ হয়ে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত গা়ড়ি চলাচল কবে শুরু হবে, তা অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৪
Share:

উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ এমনিতেই বিশ বাঁও জলে। ভাঙা উড়ালপুলের তলার রাস্তা নিয়েও ফাঁপড়ে পড়েছে লালবাজার। পুলিশ সূত্র বলছে, হাওড়া স্টেশন থেকে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে পোস্তা, গণেশ টকিজ হয়ে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত গা়ড়ি চলাচল কবে শুরু হবে, তা অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। ফলে পুজোর সময়ে মধ্য কলকাতায় বড় মাপের যানজটের আশঙ্কা করছেন পুলিশকর্তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকল্প কী ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও এখনও কোনও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না বলেই লালবাজার সূত্রের দাবি। হাওড়ার দিক থেকে আসা বেশির ভাগ গাড়ি পোস্তার ওই রাস্তা দিয়েই উত্তর কলকাতায় যেত।

Advertisement

চলতি বছরের ৩১ মার্চ ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ পোস্তা উড়ালপুল। মৃত্যু হয় ২৩ জনের। এর পর থেকেই বন্ধ রাখা হয় ওই রাস্তার যান চলাচল। এ ছাড়া পুলিশের খবর, নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের যে অংশ এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা কতটা পোক্ত সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। ফলে বিশেষজ্ঞদের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ধ্বংসস্তূপ সরানো হলেও গাড়ি চলাচল শুরু করা যায়নি বিবেকানন্দ রোডে।

পুলিশ জানায়, এত দিন সে ভাবে বিষয়টি না়ড়াচাড়া পড়েনি। কিন্তু উৎসবের মরসুম শুরুর আগেই সমস্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন শীর্ষকর্তারা। সোমবার রাস্তাটি পরিদর্শনে যান পুলিশ কমিশনার রাজীবকুমার-সহ ট্রাফিক বিভাগের বহু কর্তা। পোস্তার মালাপাড়া মোড় থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত ভেঙে পড়া উড়ালপুলের নিচের রাস্তা ঘুরেও দেখেন। ওই রাস্তা বন্ধ থাকায় কোথায় অসুবিধা হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করেন সিপি।

Advertisement

পুলিশ জানায়, পোস্তা উড়ালপুলের রাস্তা বন্ধ থাকায় এখন হাওড়া ব্রিজ থেকে আসা গাড়ি স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে আহিরীটোলা স্ট্রিট, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট হয়ে উত্তর কলকাতা বা উত্তর শহরতলিতে পাঠানো হয়। কিন্তু পুজোর দিনে দর্শনার্থীদের ভিড়ে বন্ধ রাখা হয় আহিরীটোলা স্ট্রিট, নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, যদুনাথ মল্লিক স্ট্রিট ও রবীন্দ্র সরণির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এমনকী পুজোর ক’দিন দুপুর থেকে স্ট্র্যান্ডব্যাঙ্ক রোডের যান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওই সময়ে হাওড়া থেকে আসা গাড়িগুলিকে কী ভাবে মধ্য ও উত্তর কলকাতায় পাঠানো হবে, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে সমস্যা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অনেকেই ছোট বা মাঝারি মাপের চারচাকা নিয়ে ঠাকুর দেখতে আসেন। ফলে উত্তর কলকাতার দর্শনার্থীদের গাড়ি কী ভাবে শহরে ঢুকবে, সেটাই এখন মাথাব্যথা।’’

এই মাথাব্যথা সারাতেই সিপির কাছে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের একাংশ। পুলিশ জানায়, উত্তর কলকাতার ওই সব রাস্তা বন্ধ থাকায় হাওড়া ব্রিজ দিয়ে আসা গাড়িগুলিকে স্ট্র্যান্ড রোডের উত্তর দিকে নামতে দেওয়া হবে না। বদলে তাদের ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুল দিয়ে ডালহৌসির দিকে পাঠানো হবে। টি বোর্ডের কাছ থেকে বাঁ দিকে ঘুরে পোদ্দার কোর্ট, নিউ সিআইটি রোড দিয়ে গাড়ি পৌঁছবে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। যদিও এই প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে লালবাজারের অনেকের। তাঁরা বলছেন, মহম্মদ আলি পার্ক-সহ বহু পুজোর জন্য চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে এমনিই যানজট হয়। হাওড়ার দিক থেকে গাড়ি এলে তা আরও বাড়বে। এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা স্তব্ধ হয়ে গেলে পুজোয় যান চলাচল পুরো ঘেঁটে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় নিয়েই আশায় পুলিশ অফিসারেরা। তাঁরা বলছেন, উ়ড়ালপুলের ভগ্নাংশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আইআইটি খড়্গপুর ও রেলের সংস্থা ‘রাইটস’-এর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন লালবাজারের কর্তারা। এক প্রস্ত সমীক্ষা করেছেন তাঁরা। পুজোর আগে ওই বিশেষজ্ঞদের ফের উড়ালপুলের কাঠামো পরীক্ষা করার কথা। তার পরে যান চলাচলের ছাড়পত্র মিললেই কেটে যাবে যানজটের চিন্তা। কিন্তু এত জট উৎসবের আগে কাটে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement