একটি অ্যাপনির্ভর ক্যাবে অসুস্থ হয়ে পড়া এক মত্ত যাত্রীকে নিয়ে শনিবার রাতেই হয়রান হয়েছিলেন চালক। অমানবিকতার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই ফের একই ধরনের পরিস্থিতি। এ বার অবশ্য মানবিক পুলিশের দেখা পেল শহর।
পুলিশ জানায়, সোমবার ভোরে দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্কে রাস্তার মাঝখানে সন্দেহজনক ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল একটি সেডান গাড়ি। আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছিল ভিতরে এলিয়ে থাকা যুবককেও। ভোর চারটে নাগাদ এই দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ান মোটরবাইকে টহলরত লেক থানার পুলিশকর্মী। গাড়ির কাছে গিয়ে দরজায় টোকাও দেন তিনি। তবে সাড়া মেলেনি। তপন চট্টোপাধ্যায় নামে ওই পুলিশকর্মীর কাছে খবর পেয়ে থানা থেকে ছুটে আসেন আরও কর্মী-অফিসারেরা। গাড়ির দরজা খুলে তাঁরা দেখেন, যুবকের শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। কিন্তু পুরোপুরি অচেতন তিনি। লেক থানার পুলিশই ওই যুবককে থানায় নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে। পরে পরিবারের লোকেদের খবর দিয়ে তাঁদের হাতে ওই যুবককে তুলে দেওয়া হয়।
শনিবার গভীর রাতে নেশার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়া এক যাত্রীকে নিয়ে শহরের তিনটি থানায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন অ্যাপ-ক্যাব চালক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। সাহায্য তো মেলেইনি, পুলিশের ধমক খেতে হয় তাঁকে। এমনকী উল্টে তাঁকে গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। শনিবার রাতের এই ঘটনার পরে আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ তিনটি থানার অমানবিক মুখ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু পুলিশের মানবিক মুখটাই যে স্বাভাবিক, এ দিন ভোরে লেক থানার কর্মীরা তা প্রমাণ করেছেন বলেই দাবি করছেন লালবাজারের অনেকে।
এ দিনের ঘটনায় ওই যুবকের এমন দশা হল কী করে?
পুলিশ সূত্রে খবর, পরে সকালে ওই যুবক সুস্থ হলে তাঁর সঙ্গে বিশদে কথা বলেন লেক থানার অফিসারেরা। পুলিশকে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ব্যবসা করেন। তাঁর বাড়ি কসবা এলাকায়। পুলিশের দাবি, ওই যুবক আরও জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরেই ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যে রয়েছেন তিনি। সেই কারণে মাঝেমধ্যেই মদ্যপান করেন। রবিবার রাতেও মদ খেয়েছিলেন তিনি। তার পরে গাড়ি নিয়ে শহরের নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। পুলিশের দাবি, সেই ঘোরাঘুরির সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই যুবক। অসুস্থ বোধ করে বাড়ি ফিরতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলপার্কের কাছে পৌঁছে আরও বেশি শরীর খারাপ লাগায় সেখানেই গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। তার পরেই তাঁকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি রাতেই কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় মোটরবাইকে টহল দেন স্থানীয় থানার কর্মী-অফিসারেরা। সেই অনুযায়ীই রবিবার গভীর রাত থেকে লেক থানার বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি চলছিল। তখনই গোলপার্কের ওই এলাকায় পৌঁছে গাড়িটি প্রথম দেখতে পান তপনবাবু। পরিস্থিতির ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তিনিই অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে থানায় ফোন করেন। এর পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লেক থানার বাহিনী।