ওটিপি জানার ফোনেই উদ্ধার চোরাই মোবাইল

শুক্রবার দুপুরে শ্যামপুকুর থানায় হাজির হয়ে বিকাশ জানান, তাঁর আর একটি নম্বরে ফোন করে এক ব্যক্তি ওটিপি জানতে চেয়েছেন। যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি একটি মোবাইল সারানোর দোকানের মালিক।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

১৩ দিন আগে মোবাইল ফোন চুরি গিয়েছিল এক যুবকের। শুক্রবার তাঁরই আর একটি নম্বরে ফোন করে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আপনি যে ফোনটি খুলতে দিয়েছেন, তার একটা ওটিপি গিয়েছে আপনার কাছে। সেটা বলুন।’’ কোনও মতে ঠিকানা জেনে নিয়ে ওই ব্যক্তির কাছে গিয়ে যুবক দেখেন, তিনি আদতে একটি মোবাইল সারাইয়ের দোকানের মালিক। সেখানেই তাঁর চুরি যাওয়া ফোনটির লক খুলতে দেওয়া হয়েছে। ওটিপি জানতে ভুল করে যাঁর ফোন চুরি গিয়েছে, তাঁকেই ফোন করে বসেছেন ওই দোকানদার!

Advertisement

এর পরে সে দিনই দুপুরে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ গিয়ে ফোনটি উদ্ধার করে। শনিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য এই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৫ অক্টোবর, সপ্তমীর রাতে শোভাবাজারের কানারাজাবাগান এলাকার বাসিন্দা বিকাশ সিংহ স্থানীয় শ্যামপুকুর থানায় তাঁর মোবাইল চুরি গিয়েছে জানিয়ে এফআইআর দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত চালালেও গত ১৩ দিনে ফোন বা চোরের কোনও হদিস মেলেনি। বিকাশের নিজস্ব পাসওয়ার্ড ছাড়া ফোনটি খোলা সম্ভব ছিল না। এমনও ব্যবস্থা করা ছিল যে, কেউ ফোনটি খোলার জন্য পাসওয়ার্ড বদলের চেষ্টা করলে বিকাশেরই অন্য একটি মোবাইল নম্বরে ছয় সংখ্যার একটি ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড পৌঁছে যাবে।

শুক্রবার দুপুরে শ্যামপুকুর থানায় হাজির হয়ে বিকাশ জানান, তাঁর আর একটি নম্বরে ফোন করে এক ব্যক্তি ওটিপি জানতে চেয়েছেন। যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি একটি মোবাইল সারানোর দোকানের মালিক। বিকাশের কথায়, ‘‘এক যুবক ওই ব্যক্তিকে আমার মোবাইলের লক খুলতে দিয়েছিলেন। লক খোলার চেষ্টা করতেই আমার অন্য নম্বরে ওটিপি চলে এসেছে। যে নম্বরে ওটিপি গিয়েছে, সেটিতে ফোন করেই তা জানতে চেয়েছেন ওই ব্যক্তি। তিনি বোঝেননি, ফোনটা কার কাছে যাচ্ছে।’’ বিকাশ আরও দাবি করেন, চুরির এফআইআরের প্রতিলিপি দেখালেও তাঁকে ওই দোকানদার ফোনটি ফেরত দেননি। উল্টে বলে দিয়েছেন, ‘‘যে আমায় ফোনের লক খুলতে দিয়েছে, তার হাতেই ফোন দেব। তোমাকে দিয়ে দিলে সে পরে এসে ঝামেলা করবে।’’

Advertisement

এর পরেই শ্যামপুকুর থানার কয়েক জন পুলিশকর্মী বিকাশের সঙ্গে ওই মোবাইলের দোকানে যান। সমস্যা হতে পারে ভেবে কয়েক জন উর্দিধারী পুলিশকর্মীকেও দলে নেন তাঁরা। এর পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই দোকানে বসেই ফোন দিয়ে যাওয়া যুবকের অপেক্ষা করে পুলিশ। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ এক যুবক ওই ফোন নিতে আসতেই পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশের দাবি, থানায় বারংবার জিজ্ঞাসাবাদ করলেও ওই যুবক দাবি করেছেন, তিনি ফোনটা চুরি করেননি। চোরের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগও নেই। এক মাদকাসক্তের থেকে কয়েক দিন আগেই দেড় হাজার টাকা দিয়ে তিনি ফোনটা কিনেছিলেন। শ্যামপুকুর থানার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এ বার ওই মাদকাসক্তকে কোথায় খুঁজব? ফোনটা পাওয়া গিয়েছে এটাই বড় কথা।’’ যদিও কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা শুক্রবারই মাসিক অপরাধ বৈঠকে চোরের পাশাপাশি চুরির মাল যাঁরা কিনছেন, তাঁদেরও ধরতে হবে বলে বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তও বললেন, ‘‘কাগজপত্র ছাড়া কেউ ফোন কিনবেনই বা কেন? এ ভাবে কেনা-বেচা আটকাতে পুলিশের আরও কড়া হওয়া প্রয়োজন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement