—প্রতীকী চিত্র।
রীতিমতো পরিকল্পনা করে ডেকে এনে মারধর করে যুবক ও তাঁর গাড়ির চালককে ঘরে আটকে রাখা হয়। ওই যুবকের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে সিনেমা দেখে ও শহর ঘুরে শেষে তাঁর বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। আনন্দপুর ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে নেমে হাতে আসা এমনই তথ্যে কার্যত চোখ কপালে উঠেছে পুলিশকর্তাদের!
মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে অপহরণের একটি পাল্টা অভিযোগ হাতে পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সেখানে ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদেরই অপহরণ করা হয়েছে বলে নেতাজিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেই অপহরণ মামলার তদন্তে নেমে শনিবার শৌভিক দাস মাল ওরফে সানি নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা। ধৃতকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাঁর দশ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।
ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেতাজিনগরের অপহরণ-কাণ্ডের পাশাপাশি ধর্ষণ-রহস্যেরও একাধিক তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত শৌভিক এবং তাঁর এক সঙ্গী যুবকের পরিকল্পনাতেই সিনেমার বিষয়ে কথা বলার অছিলায় বেহালার বাসিন্দা যুবককে গত সোমবার নেতাজিনগরে ডাকিয়ে আনা হয়। ওই যুবককে ফোন করেছিলেন শৌভিকই। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শৌভিকের ফোন পেয়ে চালককে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান যুবক।
তদন্তে উঠে এসেছে, এর পরে ওই যুবক এবং তাঁর চালককে মারধর করে নেতাজিনগরের একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখেন শৌভিক ও তাঁর সঙ্গী যুবক। দু’জনকে ঘরের ভিতরে হাত-পা বেঁধে আটকে রেখে ওই যুবকের গাড়ি নিয়ে বেরোন শৌভিকেরা। তাঁদের সঙ্গী হন ধর্ষণের অভিযোগকারিণীও। তদন্তে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারিণী শৌভিকের বন্ধুর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যায় গড়িয়াহাট সংলগ্ন একটি মলে সিনেমাও দেখেন। তার পরে শৌভিককে সঙ্গে নিয়ে তিন জন বেরোন। গাড়ি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আনন্দপুর থানা এলাকায় ঘুরে বেড়ান অভিযোগকারিণী। এমনকি, বাসন্তী হাইওয়েতে তিন জনকে একসঙ্গে গাড়িতে দেখা যায়। পুলিশের সিসি ক্যামেরায় সেই ছবিও ধরা পরেছে।
এ সবের পরে ওই রাতে গাড়ির ভিতরে বেহুঁশ করে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে আনন্দপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অভিযোগকারিণী তরুণী। অভিযোগে নাম দেওয়া হয় নেতাজিনগরের ফ্ল্যাটে আটকে থাকা বেহালার বাসিন্দা যুবক এবং চালকের বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পরিকল্পনা করেই বিষয়টি সাজিয়েছিলেন শৌভিকেরা। পুলিশের নজর ঘোরাতে এবং ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ মজুত করতেই অপহৃতদের গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিন জন। তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁরা একাধিক বার গাড়ি পাল্টান। মোবাইলের একাধিক সিম ব্যবহারের প্রমাণও হাতে পেয়েছে পুলিশ।
রাতে গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে পূর্ব যাদবপুর থানায় গিয়েছিলেন অভিযোগকারিণী তরুণী। ঘটনাটি আনন্দপুর থানা এলাকায় হওয়ায় পূর্ব যাদবপুর অভিযোগ না নিয়ে আনন্দপুর থানায় তরুণীকে পাঠিয়ে দেয়। সেই রাতে আনন্দপুর থানাতেই গাড়ির ভিতরে বেহুঁশ করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। তদন্তকারীরা মনে করছেন, বেহালার বাসিন্দা অপহৃত যুবককে ফাঁসাতেই গোটা ঘটনা সাজানো হয়েছিল।
লালবাজারের তরফে তরুণীর দায়ের করা ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা না হলেও, সব দিক খোলা রেখে তদন্ত চলছে বলে জানানো হয়েছে। তদন্তকারী এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঘটনার পিছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার কিছু ইঙ্গিত আমরা ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পেয়েছি। দু’টি অভিযোগও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে আনন্দপুর থানায় ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। সম্পর্ক ‘জোড়া’ লাগানোর নামে ডেকে এনে গাড়ির ভিতরেই বেহুঁশ করে বেহালার বাসিন্দা এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন তরুণী। ধর্ষণে অভিযুক্ত পরে নেতাজিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যে, তাঁদেরই অপহরণ করা হয়েছিল। ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ দায়েরের পরেই তরুণী নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় গোটা ঘটনায় রহস্য বেড়ে যায়।
আদালতে তরুণীর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। পরে অবশ্য আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আনন্দপুর থানায় হাজির হন তরুণী। আপাতত, ওই তরুণীকে হোমে রাখা হয়েছে। ধৃত শৌভিকের সঙ্গী যুবক পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।