পাশে আছি: এলাকার এক প্রবীণের সঙ্গে কথা পুলিশ আধিকারিকদের। বৃহস্পতিবার, টালায়। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক মাসে শহরের কিছু জায়গায় বৃদ্ধ দম্পতিকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কার্যত নিঃসঙ্গ অবস্থায় ছিলেন। পরপর এমন ঘটনার পরেই পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বুধবার লালবাজারে এক বৈঠক করে সব থানাকে নির্দেশ দেন, এলাকায় প্রবীণেরা কেমন আছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হবে অফিসারদের। কী ভাবে তাঁদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া যায়, ভাবতে হবে তা-ও। প্রয়োজনে তাঁদের বাড়িতে বসাতে হবে সিসি ক্যামেরা।
সিপি-র নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবার থেকেই থানার আধিকারিকেরা এলাকার নিঃসঙ্গ প্রবীণদের তালিকা তৈরি করে, তাঁদের সঙ্গে দেখা করে আশ্বস্ত করছেন। বিপদে পড়লে তাঁরা কোথায় ফোন করবেন, দিয়েছেন সেই নম্বরও। বিশেষত যে সব ফ্ল্যাট-বাড়িতে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধারা একা থাকেন, সেই বাড়ির পরিচারিকা, খবরের কাগজ বিক্রেতা থেকে শুরু করে সেখানে যাতায়াত করা মিস্ত্রি এবং ওই নাগরিকদের সাহায্যকারী রিকশাওয়ালাদের নাম-ফোন নম্বর দিয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে প্রতিটি থানা।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই নজরুল মঞ্চে পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, ‘‘এক-একটি ক্লাব ও পুজো কমিটি শহরের এক-একটি রাস্তার দায়িত্ব নিক। যে প্রবীণ দম্পতিরা একা থাকেন, ছেলেমেয়েরা থাকেন বাইরে, তাঁদের দেখভাল করুক তারা। কারণ, পুজো কমিটিতে সব বয়সের মানুষ থাকেন। প্রবীণ নাগরিকদের খোঁজখবর করার দায়িত্ব যাতে তাঁরা নেন, আমি সেই অনুরোধ করছি।’’
এ দিনই টালা থানার অফিসারেরা তাঁদের এলাকায় কয়েক জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বাড়ি যান। অফিসারেরা নিজেদের নাম-ফোন নম্বর ওই প্রবীণদের দিয়ে আসেন। একই ছবি ট্যাংরা থানা এলাকায়ও। প্রবীণদের বাড়ির প্রবেশপথে গ্রিলের দরজা, সিসি ক্যামেরা আছে কি না, জানতে চান থানার আধিকারিকেরা।
একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখভালের জন্য চালু আছে কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্প। লালবাজারের খবর, বৈঠকে সিপি সেই প্রকল্পকেই কার্যত ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রবীণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ (এসওপি) বা আদর্শ কর্তব্যবিধি চালু করেছে লালবাজার।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরে প্রবীণদের খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব এত দিন ছিল প্রতি থানার এক জন কনস্টেবলের উপরে। ঠিক হয়েছে, প্রবীণদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাঁদের দেখভাল করা হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখবেন প্রতিটি ডিভিশনের অধীনে থাকা ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। এক পুলিশকর্তা জানান, প্রতিটি থানাকে বলা হয়েছে, এলাকায় কোন প্রবীণ নাগরিকের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা নেই সেই তালিকা তৈরি করতে। সেখানে রাস্তায় থাকা ক্যামেরা দিয়ে যদি পুরো বাড়িতে নিরাপত্তা দেওয়া যায়, তা হলে নতুন ক্যামেরা বসানো হবে না। যদি প্রয়োজন পড়ে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ ক্যামেরা বসিয়ে তার দেখভালের ব্যবস্থাও করবে।