প্রতীকী ছবি।
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যে কোনও তদন্তের জন্যই পুলিশের কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, একই বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে থাকা নিউ টাউন শহর সিসি ক্যামেরায় মোড়া থাকলেও লাগোয়া গ্রাম এলাকায় সেই ব্যবস্থা নেই। যার জেরে রাজারহাটে নৃশংস ভাবে মহিলাকে খুনের ঘটনার তদন্ত নেমে প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে পুলিশ।
গত বুধবার বিকেলে নিউ টাউন বিধানসভার পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামের খেতের ভিতর থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলার দেহ। স্থানীয়দের সন্দেহ, মহিলাকে গণধর্ষণের পরে খুন করে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তদের কেশাগ্র ছুঁতে পারেনি বলেই খবর। রাজারহাট থানা কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, কার্যত খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো নিউ টাউন কিংবা রাজারহাটের বিভিন্ন নির্মাণস্থলে গিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের গতিবিধির খোঁজ চলছে।
ঘটনাস্থলটি বিধাননগর কমিশনারেটের রাজারহাট ও টেকনো সিটি, এই দুই থানা এলাকার সংযোগস্থলে। দুই থানার পুলিশই অপরাধীদের খোঁজে নেমেছে। ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার ওই গ্রামের মোড়। ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘন খেত থাকলেও দুষ্কৃতীদের পালাতে হলে গাঁড়াগড়ি, কাদা, কালুর মোড় কিংবা সাপুরজি হয়ে পালাতে হবে বলে পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে। কিন্তু তারা কোন পথে পালিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজের অভাবে তার খোঁজ মেলেনি বলেই খবর। গাঁড়াগড়ি এলাকার একটি মদের দোকানে সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেটির অভিমুখ দোকানের দিকে থাকায়, তার ফুটেজ কাজে লাগেনি পুলিশের।
গাঁড়াগড়ির আশপাশে রয়েছে কালুর মোড়, কাদা মোড়ের মতো গ্রাম এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। আবার অন্য দিকে রয়েছে সাপুরজি মোড়ের মতো নিউ টাউনের শহর এলাকা। কালুর মোড় কিংবা কাদা মোড়েবাসের চলাচল তেমন না থাকলেও গাড়ি-বাইকের জন্য ওই সব রাস্তা গুরুত্বপূর্ণ। সিসি ক্যামেরা না থাকায় রাতে গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটলে সেই গাড়িকে খুঁজে পেতে সমস্যা হয় পুলিশের। পুলিশের একটি অংশের মতে, গ্রাম ও শহর একসঙ্গে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে না থাকলে নিউ টাউনের দিকে অপরাধ ঘটিয়ে গ্রাম এলাকার দিকে ঢুকে দুষ্কৃতীদের গা-ঢাকা দেওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
রাজারহাটের বিডিও ঋষিকা দাসের কাছে এই সমস্যা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’ পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উত্তম বিশ্বাসের দাবি, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে। আশা করি, দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে। সিসি ক্যামেরার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হবে।’’ এপ্রসঙ্গে জানতে বিধাননগর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সদর) দেবস্মিতা দাসকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন রাজারহাট থানায় স্মারকলিপি দেয় সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। পুলিশ তাদের আশ্বাস দিয়েছে, তদন্ত চলছে।