—ফাইল চিত্র
শুধু পথচলতি মানুষই নন। একটি কুকুরছানার জীবনও যে মূল্যবান তা যেন বুঝতে শিখছে এই শহর। গাড়িতে পিষ্ট এক কুকুরছানাকে বাঁচাতে এক পুলিশকর্মীর তৎপরতা তেমনই দৃষ্টান্ত তৈরি করল রবিবার।
ঘটনাস্থল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। যেখানে দিন কয়েক আগেই ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল নার্সিংয়ের দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় সব মহলেই। ওই হাসপাতালের কাছাকাছিই ভিক্টোরিয়া কলেজ। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের উপরে ওই কলেজের সামনেই রবিবার সকালে ছোট মালবাহী গাড়ি চাপা দেয় কুকুরছানাটিকে। সেই সময়ে ডিউটি করছিলেন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার এএসআই রাজকুমার নাথানি। তিনি দেখেন, বেপরোয়া গতিতে চলা গাড়িটির সামনে পড়ে গিয়েছে কয়েক মাসের ওই কুকুরছানা। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তিনি দেখেন, জায়গাটি রক্তে ভেসে গিয়েছে। চিৎকার করছে আহত কুকুরছানাটি। তার পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে গাড়িটির চাকা।
এর পরেই এএসআই রাজকুমারবাবু কুকুরছানাটিকে কোলে তুলে নিয়ে ছোটেন বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে। একই সঙ্গে ওই ছোট মালবাহী গাড়িটিকে আটক করতে এবং সেটির চালককে গ্রেফতার করতে কালবিলম্ব করল না পুলিশও। কোনও মানুষ পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়লে যা যা করে পুলিশ, তার সবটাই করা হল কুকুরছানাটির জন্যও।
রাজকুমারবাবু জানান, কুকুরছানাটির ডান দিকের পিছনের পা-টি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। হাড়ের উপর থেকে চামড়া উঠে গিয়ে পা দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে তিনিই অভিযোগ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ম্যাটাডর চালকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো (২৭৯) এবং ১০ টাকার বেশি মূল্যের প্রাণীকে হত্যার চেষ্টা (৪২৮) এবং প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমাল অ্যাক্ট ১৯৬০-র ১১(এ) ধারায় মামলা রুজু করে চালককে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
রাস্তার ধারে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের বাচ্চাটির কোনও মালিক ছিল না। তাই তিনিই হাসপাতালের ফর্ম পূরণ করে ডাক্তারদের চিকিৎসা শুরু করতে বলেন। রাজকুমারবাবু জানান, চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন পায়ে সেলাই না করলে কুকুরছানাটিকে বাঁচানো যাবে না। প্রায় ৪০টি সেলাই পড়ে পায়ে। কিন্তু এর পরেও কুকুরটির বিশ্রাম এবং ভাল খাবারের প্রয়োজন ছিল। থানায় কুকুরছানাটিকে রাখা না যাওয়ায় রাজকুমারবাবু তাঁর থানার মাধ্যমেই একটি পশুকল্যাণে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যোগাযোগ করেন। দুপুরে পশু হাসপাতাল থেকে কুকুরটিকে মোটামুটি সুস্থ করিয়ে মহেশতলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আপাতত সেখানেই রয়েছে সে।
রাস্তার একটি কুকুরছানাকে বাঁচিয়ে খুশি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার অফিসার ইনচার্জ কৌশিক দাস-সহ সকলেই। তবে রাজকুমারবাবু এর আগে দুর্ঘটনায় জখম একটি গোরুকেও এভাবে বাঁচিয়ে ছিলেন বলে জানান তাঁর সহকর্মীরা।