সুবোধ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
দু’হাতে গুলি চালানোয় সিদ্ধহস্ত বছর আটাশের যুবক। তাই ঝাড়খণ্ডের ডালটনগঞ্জের দুষ্কৃতী উত্তম কুমার সহজেই বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংহের খাস লোক হয়ে উঠেছিল। বেলঘরিয়ায় ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর দায়িত্ব তাই দেওয়া হয়েছিল উত্তমকেই। গত শনিবার মধ্যপ্রদেশ থেকে তাকে গ্রেফতার
করে নিয়ে আসার পরে এমনই তথ্য উঠে এসেছে ব্যারাকপুর পুলিশের তদন্তে।
গত ১৫ জুন দুপুরে অজয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে ছয় রাউন্ড গুলি চলে। সেই ঘটনার কিনারা হয়েছে বলে সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া। ঘটনার নেপথ্যে ‘সুবোধ গ্যাং’ ছিল বলেও এ দিন ফের জানান তিনি। নগরপাল বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরের ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে তোলাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তোলাই ছিল সুবোধের মূল উদ্দেশ্য৷’’ তিনি জানান, পুরো ঘটনায় সুবোধ ও তার অতি ঘনিষ্ঠ শাগরেদ রওশন যাদব-সহ মোট ১২ জন যুক্ত ছিল। তাদের আট জনকে ধরেছে পুলিশ। বাকি চার জন অন্য রাজ্যে জেলে বন্দি। তাদেরও হেফাজতে নেওয়া হবে। অজয়ের গাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনার পরে সুবোধের দলকে ধরতে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ), ডিসি (গোয়েন্দা), এসিপি (বেলঘরিয়া) এবং বেলঘরিয়া, বরাহনগর, কামারহাটি ও দক্ষিণেশ্বর থানার ওসি-সহ কয়েক জন অফিসারকে নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল।
বেলঘরিয়ার ঘটনায় সুবোধের যোগ মেলার পরে বিহারের সমস্তিপুর থেকে তিন জনকে ধরা হয়। তারাই ঘটনার এক দিন পরে অজয়কে ফোন করেছিল। তাদের জেরা করেই তদন্তে নতুন দিকগুলি খুলতে শুরু করে। নগরপাল জানান, ঘটনার ছক কষেছিল সুবোধ। হামলাকারীদের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের বন্দোবস্ত করেছিল রওশন। সবটাই সুবোধ ও রওশন করেছিল বিহারের বেউর জেল থেকে। রওশনের নির্দেশে বিহার থেকে মোটরবাইক ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এ রাজ্যে এসেছিল আলতাব রাজা আর সাহিল সিংহ। ব্যারাকপুর পুলিশ তাদের ধরলেও গুলি চালানো দুষ্কৃতীদের খোঁজ মিলছিল না।
পরে বিহার থেকে সুবোধ ও রওশনকেও এ রাজ্যে নিয়ে আসে পুলিশ। তাদের জেরা করে জানা যায় উত্তম ও রিশুকুমার পাণ্ডের নাম। অজয়ের গাড়িতে গুলি চালিয়েছিল উত্তম। ব্যাগে ভরে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র এনেছিল সে। বাইক চালিয়েছিল রিশু। ঘটনার পরে দু’জনেই ডালটনগঞ্জে পালায়। পরে বেআইনি অস্ত্র-সহ ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন জেলে রিশু। উত্তম মধ্যপ্রদেশে গা-ঢাকা দিয়েছিল। সে এক সময়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও মাঝপথে ছেড়ে পালিয়ে আসে। তার পরেই যুক্ত হয় অপরাধ জগতে।
গুলি চালানোর দিন অন্য বাইকে উত্তমদের অনুসরণ করছিল ডালটনগঞ্জেরই অন্য দুই দুষ্কৃতী, বিবেক ও পঙ্কজ শর্মা। তাদের এলাকা চেনায় ডালটনগঞ্জেরই আর এক দুষ্কৃতী শশিভূষণ প্রসাদ ওরফে পিন্টু। সে-ও সুবোধের অতি বিশ্বস্ত। তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উত্তম ছাড়া বাকি দুষ্কৃতীদের নিয়োগের জন্য।
রাঁচীতে সোনার দোকানে দেড় কোটি টাকার সোনা লুটের ঘটনায় জেলে রয়েছে বিবেক, পঙ্কজ ও শশিভূষণ। উত্তম, বিবেক-সহ জনা সাত-আট দুষ্কৃতীকে বালির ভাড়া বাড়িতে ১৫-২০ দিন রাখার ব্যবস্থা করেছিল শশিভূষণ। গুলি চালানোর ঘটনার পরে সকলে ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে যায়। বালিতে ওই দলে বিরলা নামে এক দুষ্কৃতীও ছিল, যে রান্না করত ও ফাইফরমাশ খাটত। এর আগে একটি ঘটনায় বিরলার মাধ্যমে এক দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায়। তাই গুলি-কাণ্ডের পরে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ১৮ জুন তাকে ঝাড়খণ্ডে গুলি করে খুন করা হয়।
এ দিন উত্তমকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন ব্যারাকপুর আদালতের বিচারক।