Manhole

Manhole: ম্যানহোলে পড়ে মৃত্যুতে মামলা রুজু পুলিশের

দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস এলাকায় ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে রঞ্জন সাহা নামে এক অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করল চিৎপুর থানার পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:০৪
Share:

দুর্ঘটনার পরে দমদমের ওই ম্যানহোলের মুখে ঢাকনা লাগানো হয়েছে। রবিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস এলাকায় ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে রঞ্জন সাহা নামে এক অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করল চিৎপুর থানার পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ কী এবং কী ভাবে রঞ্জনবাবু ম্যানহোলে পড়ে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে মৃতের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ম্যানহোলের ঢাকনা কারা সরিয়েছেন, তা যেমন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তেমনই ওই ব্যক্তি সেখানে কেন গেলেন, তা-ও দেখা হচ্ছে। রবিবার পুলিশ ওই এলাকার বেশ কয়েক জন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে সূত্রের খবর। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শ্বাসনালিতে মাটি এবং কাদা ঢুকে যাওয়ার ফলেই ওই অটোচালকের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এ ছাড়া, মৃতের মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শৌচকর্ম করার জন্যই স্থানীয় কেউ ওই ম্যানহোলের ঢাকনা সরিয়ে থাকতে পারেন। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখবে পুলিশ।

Advertisement

ম্যানহোল কেন খোলা ছিল, তা নিয়ে রবিবারও দায় ঠেলাঠেলি চলছে। শনিবার কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিমও দাবি করেছিলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা শৌচকর্মের জন্য ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে রাখেন। রবিবার মৃতের স্ত্রী সোমা সাহার প্রশ্ন, ‘‘আমার স্বামী তো ম্যানহোলে শৌচকর্ম করতে যাননি। তাঁর মৃত্যুর দায় কে নেবে?’’ শোকে বিহ্বল সোমা দুই ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁর আর্জি, ‘‘স্বামীর রোজগারে সংসার চলত। প্রশাসন আমার কলেজপড়ুয়া বড় ছেলের রোজগারের একটা ব্যবস্থা করে দিক।’’

দুর্ঘটনাস্থলটি কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় পড়ে। ওই ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর পুষ্পালি সিংহেরও অভিযোগ, ‘‘লাগোয়া মরিচঝাঁপি বস্তির বাসিন্দারা দমদম রোডে প্রায়ই ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে শৌচকর্ম সারেন। তাঁদের বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও কাজ হয়নি।’’ মরিচঝাঁপি বস্তি পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাধীন। মৃতের মেজো ভাইয়ের স্ত্রী অচলা সাহা দত্তের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যদি শৌচালয় হিসাবে ব্যবহারের জন্য স্থানীয়েরা ম্যানহোলের ঢাকনা খোলেন, তা হলে সেটা প্রশাসনেরই গাফিলতি। কেন সেখানে পুরসভার তরফে শৌচালয় তৈরি করা হয়নি?’’ মৃতের পরিজনদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও অভিযোগ, এলাকায় পুরসভার তরফে কোনও শৌচালয় তৈরি করা হয়নি। কলকাতা পুরসভার বস্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘কোনও ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর শৌচালয় নির্মাণের দাবি জানালে তা পূরণ করা হয়। কিন্তু প্রস্তাব না এলে কী ভাবে শৌচালয় নির্মাণ করব? তবে মরিচঝাঁপি বস্তিতে শৌচালয় রয়েছে কি না অথবা না থাকলে কেন এত দিন তৈরি হয়নি, খতিয়ে দেখা হবে।’’

Advertisement

এ দিকে শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনার জেরে শহরে ম্যানহোলের নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিটি ওয়ার্ডে পুর ইঞ্জিনিয়ারদের সতর্কমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।
এই মর্মে পুরসভার ডিজি-র (নিকাশি) তরফে প্রতিটি বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আগামী দিনে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় পুরসভা ও পূর্ত দফতর একযোগে সচেতনমূলক প্রচার করবে বলেও জানানো হয়েছে। পূর্ত দফতরের তরফে রবিবার জানানো হয়েছে,
ওই এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই বলে পুরসভার তরফে বলা হয়েছিল। কিন্তু ঢাকনা বসানো হলেও সেগুলি ফের উধাও হয়ে যায়। পূর্ত দফতরের তরফেও অভিযোগ, স্থানীয়েরা আবর্জনা ফেলা ও শৌচকর্মের জন্য ম্যানহোলের ঢাকনা সরান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement