লকগেট ব্রিজ। ফাইল চিত্র
লকগেট উড়ালপুলে দ্বিমুখী ভাবে ছোট গাড়ি তো বটেই, এমনকি বাস চালালেও ঝুঁকির কিছু নেই। সেতু বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ বিষয়ে তাঁদের এই মনোভাব জানানোর পরেও কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ওই উড়ালপুল দ্বিমুখী করার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই।
ফলে স্থানীয়দের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, উড়ালপুল দ্বিমুখী করার পক্ষে বিশেষজ্ঞেরা সায় দিলেও কেন পুলিশ সেই প্রস্তাব নাকচ করছে। এর পিছনে পুলিশের একাংশের কোনও ‘স্বার্থ’ কাজ করছে, না কি গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারার ‘ব্যর্থতা’ ঢাকতে চাইছে পুলিশ, উঠছে সেই প্রশ্নও।
লকগেট উড়ালপুলে একইসঙ্গে দু’দিক দিয়ে যান চলাচলের না করানোর পক্ষে পুলিশ দু’টি যুক্তি দিয়েছে। প্রথমত, ওই উড়ালপুল চওড়ায় কম। দ্বিতীয়ত, উড়ালপুলটি ভারী গাড়ির ভার বহনের উপযুক্ত নয়। যদিও সেতু বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের (আইআরসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী এই উড়ালপুলগুলি ৭০ থেকে ১০০ টন গাড়ির ভার বহনে সক্ষম। ফলে সে দিক থেকে গাড়ির ওজন কোনও সমস্যা নয়।
সেতু বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ সোম বলছেন, ‘‘গতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই উড়ালপুলে ছোট গাড়ি তো বটেই, বাস, ছোট লরিও চালানো যেতে পারে
দ্বিমুখী ভাবে। ওই উড়ালপুলের ভার বহনের যে প্রশ্নটা সামনে আসছে, তার পিছনে খুব একটা যুক্তি নেই। কারণ আইআরসি-র নিয়ম অনুযায়ীই ওই উড়ালপুল ভার বহনে সক্ষম।’’ হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) ওই উড়ালপুল তৈরির দায়িত্ব যে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছিল, তার পক্ষে সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘তখন যে ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে বাস, ছোট লরি চলার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই নেই।’’
তবে এর বিপরীত কথা বলছেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘ওই উড়ালপুল কোনও ভাবেই দ্বিমুখী করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, একই সঙ্গে দু’দিক দিয়ে গাড়ি চলাচল করানোর জন্য উড়ালপুল যতটা চওড়া হওয়ার প্রয়োজন ছিল, এখানে তত জায়গা নেই। ফলে দ্বিমুখী হলে যানজটের সমস্যা হবে প্রবল ভাবে।’’
পুলিশের এই যুক্তির সঙ্গে একমত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণবিদ্যার অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোনও রাস্তা বা উড়ালপুলের ধারণ ক্ষমতা (ট্র্যাফিক ভল্যুম) নির্ভর করে সেই রাস্তা বা উড়ালপুল কতটা চওড়া তার উপরে। কিন্তু ওই উড়ালপুল যেহেতু চওড়ায় কম, তাই ব্যস্ত সময়ে দ্বিমুখী ভাবে গাড়ি চললে যানজট হবেই। আর কোনও গাড়ি যদি মাঝ পথে খারাপ হয়, তা হলে তো পুরো পরিস্থিতিই হাতের বাইরে চলে যাবে।’’
যদিও স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন— ‘‘উড়ালপুল দ্বিমুখী করতে পুলিশি সক্রিয়তা ও পরিকল্পনায় খামতি নেই তো? পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে প্রয়োজনীয় পুলিশকর্মী আছে কি? ঠিক মতো পরিকল্পনা না করে কেন পুলিশ দায়িত্ব এড়াতে চাইছে?’’