‘প্রভাবশালী’, তাই কি ছাড় বেআইনি জলসায়

রাত ১০টা বেজে যাওয়ার পরেও মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজানোই শুধু বেআইনি নয়। পাড়ায় পাড়ায় বেশি রাত পর্যন্ত জলসার গোড়াতেও গলদ।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

গোড়াতেই বেআইনি। কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা তাই তেমনই হবে!

Advertisement

রাত ১০টা বেজে যাওয়ার পরেও মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজানোই শুধু বেআইনি নয়। পাড়ায় পাড়ায় বেশি রাত পর্যন্ত জলসার গোড়াতেও গলদ। লালবাজার সূত্রের খবর, পাড়ার রাস্তা আটকে কিংবা কোনও ক্ষেত্রে বড় রাস্তার ধারে হওয়া ওই সব জলসার ৯০ শতাংশই কোনও পুলিশি অনুমতি ছাড়া হচ্ছে। অর্থাৎ ওই সব জলসা বেআইনি।

খোলা জায়গায় মাইক বা সাউন্ড বক্স ব্যবহার করতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক। সেই অনুমতি ছাড়া পাড়ায় কোনও জলসা বা নাচগানের অনুষ্ঠান হওয়া বেআইনি। কিন্তু তা নিতে গেলে পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে যে, নির্দিষ্ট শব্দবিধি মেনে আয়োজকেরা মাইক ব্যবহার করবেন এবং সেটা অমান্য করলে তাঁদের শাস্তিমূলক আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আর তাই পুলিশের অনুমতি এড়িয়ে বেশির ভাগ জলসার আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ রাত ১০টার পরে মাইক বাজিয়ে শব্দবিধি ভঙ্গ করার জন্যে নয়, এমনিতেও ওই সব জলসা বন্ধ করতে পারে পুলিশ। কিন্তু করে না।

Advertisement

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘আইনের দিক থেকে দেখলে, ওই সব জলসা হওয়ারই কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তা মানতে সমস্যা আছে। সেটা বুঝতে হবে।’’ ওই অফিসারের ব্যাখ্যায় বাস্তব সমস্যা হল, ‘পাড়ার দাদা’ তথা ‘রাজনৈতিক নেতা’-দের প্রভাব বা অনুরোধ। আর সেই বেআইনি জলসায় যখন রাত ১০টার পরেও মাইক বন্ধ হয় না, তখন তা আরও অপরাধ। তবে পুলিশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জানতে বা শুনতে পারে না বলে তিনি জানাচ্ছেন। এর পিছনে সেই ‘প্রভাবশালী ফ্যাক্টর’।

দক্ষিণ কলকাতার এক গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি-র কথায়, ‘‘আমরা মাইক বা সাউন্ড বক্স বন্ধ করে অনুষ্ঠান পণ্ড করতে যাই না। কারণ সেখানে প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে। তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে আমরা আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আদালকে নথি পাঠিয়ে দিই।’’

কিন্তু পুলিশের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের স্বস্তি কোথায়? গভীর রাত পর্যন্ত তারস্বরে মাইক বা বক্স বেজেই চলে। তবে যেটা হয়, আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে এবং সেখানে হাজির হয়ে তাঁদের জামিন নিতে হয়। জামিন পেতে অবশ্য বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হয় না। এতে একটা চাপ তৈরি হয় ঠিকই, তবে পরের বার এমন বেআইনি কাজ করা থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন, সেই ভয়টা তৈরি হয় না বলে পুলিশই স্বীকার করছে। তা ছাড়া এই ব্যবস্থায় মাইক বা সাউন্ড বক্সও বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে না।

অথচ ২৪ অক্টোবর কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়ে এবং নির্দিষ্ট সময় ও নির্ধারিত শব্দসীমা পেরিয়ে মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজালে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ওই সব সরঞ্জামও বাজেয়াপ্ত করবে। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো— বিসর্জনের মিছিলে কিছু মাইক, সাউন্ড বক্স, ডিজে বাজেয়াপ্ত করা হলেও বেশি রাত পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানের মাইক বা বক্স পুলিশ তেমন আটক করেনি।

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, বেশির ভাগ জায়গায় দুর্গাপুজো, কালীপুজো বা জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজক ক্লাব বা সংস্থাই জলসার উদ্যোক্তা। তাঁর কথায়, ‘‘যাদের জলসায় রাত ১০টার পরে মাইক বা বক্স বাজছে, সেই সব ক্লাব বা সংস্থাকে আগামী বছর পুজোর অনুমতি না দিলে একটা কঠোর বার্তা যাবে। পুলিশ অন্তত সেটা করুক।’’

সেটাও পুলিশের না করার পিছনে রয়েছে সেই রাজনৈতিক প্রভাব। যে প্রভাবের ফলে বিনা অনুমতিতে হওয়া জলসাগুলির কোনও কোনওটায় অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন থাকছে পুলিশ।

এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘আগে এ সব জলসার ধার দিয়েও আমরা যেতাম না। কারণ বেআইনি জলসায় পুলিশ উপস্থিত থাকা মানে, তারাও আইন ভাঙছে। কিন্তু এখন নেতাদের সুনজরে থাকতে চাওয়া থানার অফিসারদের একাংশের সে দিকেও ভ্রূক্ষেপ নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement