প্রতীকী ছবি।
বিমানবন্দরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এক ব্যক্তির থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাঁর কাছে বিষয়টি শুনে টাকা দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তির পরিচিত আরও পাঁচ জন। কিন্তু প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়ার পরেও কারওই চাকরি জোটেনি। এ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এফআইআর দায়ের করতেই পেরিয়েছে ১০ মাস! নিজের টাকা তো গিয়েছেই, সেই সঙ্গে পরিচিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার চাপও তাঁর উপরেই এসে পড়েছে বলে ওই ব্যক্তির দাবি। চাপের মুখে তাঁর স্ত্রী-ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। পরিস্থিতি এমনই যে, তিনি কাউকেই চিনতে পারছেন না। এখন তাঁর মানসিক সমস্যার চিকিৎসা চলছে।
অলোক চৌধুরী নামে ওই প্রতারিতের বাড়ি হৃদয়পুরের সুকান্তনগরে। স্ত্রী ছাড়াও তাঁর ১৬ বছরের ছেলে রয়েছে। অলোকবাবু কলকাতার একটি সোনার বিপণিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর দাবি, লকডাউনের আগে তিনি নাগেরবাজার এলাকার একটি নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী সংস্থায় কাজ করতেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় শ্যামল মিত্র নামে এক ব্যক্তির। মানিকতলা মেন রোডের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি কলকাতা পুলিশে কাজ করতেন বলে দাবি করেন। অলোকবাবুর কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তি দিন পনেরোর জন্য ওই সংস্থায় কাজে ঢুকেছিলেন। তিনি আগে কলকাতা পুলিশে সাব-ইনস্পেক্টর ছিলেন বলে দাবি করতেন। এক প্রভাবশালী নেতার আপ্ত-সহায়ককে গুলি করার জন্য তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক ভাবে ছাঁটাই করে দেওয়া হয় বলেছিলেন। তা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে বলেও জানিয়েছিলেন। কয়েক দিন বাদেই কলকাতা বিমানবন্দরে কাজ পেয়ে গিয়েছেন বলে তিনি ওই সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন।’’
অলোকবাবুর দাবি, এর পরে প্রায়ই ভারত সরকারের স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে শ্যামল দেখা করতে আসতেন। এর কিছু দিনের মধ্যেই লকডাউন হয়ে যাওয়ায় ওই নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়।
অলোকবাবু বলেন, ‘‘দিল্লি এবং কলকাতা বিমানবন্দরে যুক্ত দুই আইপিএসের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক বলে দাবি করতেন শ্যামল। তাঁরাই ওঁর মামলা লড়ছেন বলে জানিয়েছিলেন।’’ অলোক জানিয়েছেন, দিল্লি এবং কলকাতা বিমানবন্দরে মোটা মাইনের কাজের সুযোগ রয়েছে বলে জানান শ্যামল। টাকা দিলেই দুই আইপিএস-কে বলে সেই কাজ পাইয়ে দিতে পারেন। সদ্য কাজ হারানোর পরে এ কথা শুনে স্ত্রীর নামে রাখা টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেন বলে দাবি অলোকের। তাঁর থেকে শুনে পাঁচ পরিচিতও টাকা দেন কাজ পাওয়ার আশায়। কখনও চাকরিপ্রার্থীর তালিকায় নাম ঢোকাতে, কখনও ইন্টারভিউয়ের তালিকায় নাম তোলাতে দফায় দফায় তাঁরা মোট ১৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা দেন বলে দাবি। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরে শ্যামল আর যোগাযোগ করছিলেন না বলে অভিযোগ। অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। এর পরে প্রথমে মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ করেন অলোকবাবুরা। কিন্তু লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ একাধিক জায়গায় ইমেল করেন অলোকবাবুরা। তেমনই একটি মেল করা হয় দিল্লি ও কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেই মেল পেয়ে যোগাযোগ করেন কলকাতা বিমানবন্দরের সঙ্গে। সেই সঙ্গেই অভিযোগ পৌঁছয় বিমানবন্দর থানায়। সেখান থেকেই পুলিশ যোগাযোগ করে অলোকবাবুদের সঙ্গে। তাঁদের বয়ানের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কিন্তু অভিযোগ দায়ের করতে কাউকে এত হয়রানি পোহাতে হবে কেন? গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে বারাসত পুলিশ জেলার সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় যদিও বললেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের কাছে লিখিত বা মেলে অভিযোগ এলে সেটা পড়ে থাকে না। ভদ্রলোক এসে দেখা করুন, নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করা হবে।’’