পরপর চলছে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ফের মোটরবাইক-আরোহীর হাতে আক্রান্ত পুলিশ। যাদবপুরের পরে এ বার ই এম বাইপাসের সিংহীবাড়িতে। এ বার অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে এক জন গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত পলাতক। মোটরবাইক-আরোহীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি বুধবার রাতে খোদ এক পুলিশ কনস্টেবল এবং তার বন্ধুর হাতে মার খেতে হয়েছিল পর্ণশ্রী থানার তিন পুলিশকর্মীকে।
কয়েক দিনের ব্যবধানে পরের পর এ রকম ঘটনায় পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ওই মনোভাব নিয়ে চিন্তিত কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “খোদ শহরের বুকে তল্লাশি চালানোর সময়ে যদি পুলিশকে এ রকম বাধার সামনে পড়তে হয়, তবে ধরেই নিতে হবে পুলিশের উপরে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।”
একই মত কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের। তাঁরা বলছেন, ‘‘পুলিশ মানুষের বন্ধু হতে গিয়ে নিজের জায়গা থেকে সরে এসেছে। তার ফলেই সাধারণ মানুষ এখন আর পুলিশের উর্দি দেখলে ভয় পায় না। সেই সুযোগে পুলিশকে আক্রমণ করছে দুষ্কৃতীরা। সেই সঙ্গে পর্ণশ্রীতে পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন খোদ কলকাতা পুলিশের এক কর্মী। যা কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে নেই বললেই চলে, এমন দাবি লালবাজারের পুলিশকর্তাদের।
যদিও মোটরবাইক-আরোহীদের হাতে পরপর পুলিশকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের শীর্ষকর্তারা দাবি করেছিলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রমণকারীরা মত্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশের দাবি, শুক্রবারের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই মোটরবাইক-আরোহীও মত্ত অবস্থায় ছিল।
কী ঘটেছে শুক্রবার?
পুলিশ সূত্রের খবর, স্বাধীনতা দিবসের নিরাপত্তার জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি অভিযান করছে পুলিশ। সেই মতো শুক্রবার বিকেলে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার ই এম বাইপাসের সিংহীবাড়িতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছিলেন পূর্ব যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ অফিসারেরা। অভিযোগ, বেপরোয়া ভাবে দু’টি মোটরবাইক চালিয়ে কালিকাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন মুন্না পাণ্ডে এবং প্রদীপ পট্টনায়ক নামে দু’জন।
পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার সার্জেন্ট পূর্ণেন্দুনারায়ণ বিবেকানন্দ রায় এবং এক কনস্টেবল বাইক দু’টিকে আটকে চালকদের লাইসেন্স দেখতে চান। পুলিশকর্মীরা কেন তাদের আটকেছেন, এই অভিযোগ তুলে ওই দুই যুবক পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু করে দেয়। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, প্রথমে প্রদীপের বাইকটিকে আটকানো হলে মুন্না তাতে সজোরে ধাক্কা মারেন। কোনও ক্রমে বেঁচে যান তল্লাশিকারী অফিসারেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দুই যুবকের বেপরোয়া আচরণের খবর পেয়ে সহকর্মীদের সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন ওই ট্রাফিক গার্ডের অন্য সার্জেন্ট রাজীব ঘোষাল। অভিযোগ, ওই সময়ে মুন্না পূর্ণেন্দুনারায়ণ বিবেকানন্দ রায়কে মারধর করেন এবং তাঁর পায়ে আঘাত করেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতী পুলিশ অফিসারদের গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করার হুমকিও দেয়। পরে অন্য পুলিশকর্মী মুন্নাকে ধরার চেষ্টা করলে চলন্ত অটো করে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। তবে ঘটনাস্থল থেকে প্রদীপকে আটক করে পুলিশ। আটক করা হয় দু’টি মোটরবাইকও। পরে আহত সার্জেন্টকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত দু’জনেই কসবা এলাকার বাসিন্দা। পলাতক দুষ্কৃতী মুন্না পাণ্ডের বিরুদ্ধে কসবা থানায় একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।