শিরোধার্য: সেজে উঠছে বইমেলা। বৃহস্পতিবার, করুণাময়ীর স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গণে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার কারণে করুণাময়ী মোড়ের কাছে স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গণ এলাকাকে নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘিরতে চলেছে বিধাননগর পুলিশ। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের কারণে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উপরে। পুলিশ সূত্রের খবর, আচমকা এই নিয়ে কোনও বিক্ষোভ প্রদর্শনের চেষ্টা হলে, তা ঠেকাতে রাখা হচ্ছে বিশেষ বাহিনীও।
পুলিশ সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা থেকে শুরু করে নজরদারির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই কারণে বইমেলাকে চারটি ‘জ়োনে’ ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জ়োনের দায়িত্বে থাকবেন উচ্চপদস্থ এক পুলিশকর্তা। পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণের দায়িত্বে থাকেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিক। বইমেলায় প্রস্তুত রাখা হচ্ছে মহিলা পুলিশের বিশেষ বাহিনী। নজরদারির পাশাপাশি মহিলাদের সঙ্গে কোনও অভব্য আচরণ, কটূক্তির ঘটনা ঘটলে দ্রুত তাঁরা পৌঁছে পদক্ষেপ করবেন।
মেলার ভিতরে থাকছে শতাধিক সিসি ক্যামেরার নজরদারি। তার জন্য বইমেলার ভিতরে কন্ট্রোল রুমও খোলা হবে। সেখানে একটি বিশেষ দল সেই নজরদারির দায়িত্বে থাকবে। এর পাশাপাশি ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থাকছে বইমেলায়। সেখানে সর্বদা নজরদারিতে থাকবেন পুলিশকর্মীরা। থাকছে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমও।
পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, বইমেলার ভিতরে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এবং কোনও বিক্ষোভ, মিছিল করার চেষ্টা হলে প্রস্তুত থাকবে পুলিশের দু’টি বিশেষ বাহিনী। তাঁদের সহায়তার জন্য আরও দু’টি বাহিনী মজুত রাখা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তি, ভিআইপি কিংবা ভিভিআইপিদের জন্য বিশেষ এসকর্ট বাহিনী থাকবে। তারা গত বারের মতো এ বারেও ব্লেজার পরে থাকবেন। বইমেলায় ইতিমধ্যেই তাঁরা পরিচিত ব্লেজার পুলিশ নামে।
এর পাশাপাশি ছয়টি ‘মে আই হেল্প ইউ’ ডেস্ক থাকছে। সেখান থেকেই জলের পাউচ সরবরাহ করা হবে।
শুধু বইমেলার ভিতরেই নয়, বাইরের রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নজরদারিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এমনকি ফুটপাতেও থাকছে পুলিশের কয়েকটি দল। গত কয়েক মাস ধরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যে ভাবে আন্দোলন চলছে তাতে বইমেলার সময়ে মিটিং, মিছিলের আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। সে ক্ষেত্রে আচমকা বইমেলার বাইরে বিক্ষোভ বা মিছিল হলে, তা ঠেকাতে বাহিনী প্রস্তুত থাকবে।
যদিও বিক্ষোভ ঠেকাতে পরিকল্পনা বলে মানতে নারাজ পুলিশ। তাঁদের একাংশের কথায়, কয়েক লক্ষ মানুষ যাতায়াত করবেন বইমেলায়। তাঁদের যাতায়াতে যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে তার জন্যেই পরিকল্পনা। তার সঙ্গে মিটিং ,মিছিল, বিক্ষোভের সম্পর্ক নেই।
বইমেলার বাইরে থাকবে দু’টি কুইক রেসপন্স টিম। করুণাময়ী বাস টার্মিনাসের মধ্যেও নিরাপত্তা ও নজরদারিতে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছে। বইমেলায় যাওয়ার জন্য সল্টলেকের বিভিন্ন পথে বিভিন্ন জায়গায় পথ নির্দেশিকা লাগানো হবে। কিন্তু গত বছরে অনেক বইপ্রেমীর অভিযোগ ছিল, পুলিশকর্মীদের একাংশই সল্টলেকের পথঘাট সম্পর্কে জানাতে পারেননি। তবে পুলিশের দাবি, বাইরে থেকে পুলিশকর্মীদের আনা হলে এলাকা চেনানোর ব্যবস্থা করা হবে।