পুলিশ নিগ্রহ: কেউ সাজা পায় কেউ পায় না

একই আইন এবং একই অভিযোগ। অথচ, দুই ক্ষেত্রে আইনের পৃথক ফল। মঙ্গলবার সকালে সার্ভে পার্কে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নেতৃত্বে আক্রান্ত হয়েছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। সার্ভে পার্কের ঘটনায় রাতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪১
Share:

একই আইন এবং একই অভিযোগ। অথচ, দুই ক্ষেত্রে আইনের পৃথক ফল।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে সার্ভে পার্কে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নেতৃত্বে আক্রান্ত হয়েছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। সার্ভে পার্কের ঘটনায় রাতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আইনের ভিন্নতা দেখা গেল এই ঘটনার ১১ ঘণ্টা পরে। পুলিশ জানিয়েছে, একই দিনে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দুই পুলিশকর্মীকে মারধর করেন এক ব্যক্তি। আর এই ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ধৃতের নাম নিরঞ্জন চৌধুরী। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময়ে মত্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি।

কিন্তু একই ধরনের ঘটনায় ভিন্ন আইন কেন? এই নিয়ে বুধবার যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ফৌজদারি আইনে সব সময়ে গ্রেফতার বাধ্যতামূলক নয়। ঘটনার পরিস্থিতি বিচার করে গ্রেফতার করা হয়। এই ক্ষেত্রে তদন্ত চলছে।”

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুর একটা নাগাদ নিয়ম ভাঙার অভিযোগে এক ট্যাক্সিচালককে ‘কেস’ দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন পূর্ব যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট। সন্তোষপুর এলাকার লেকপল্লিতে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশের উপরে আক্রমণের সময়ে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস নেতৃত্ব দেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় সার্জেন্ট সুকান্ত মুহুরি জখম হন। তাঁর বাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানবেন্দ্র বিশ্বাস নামে আর এক সার্জেন্টের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলারও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ মহলে কেউ কিছু বলতে না চাইলেও পরে রাতের দিকে তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাসের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। অথচ সেই ঘটনায় এখনও অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়নি।

কী ঘটেছে হরিদেবপুরে? পুলিশ জানায়, ওই রাতে নিরঞ্জনবাবু হরিদেবপুর থানার এক কনস্টেবলের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে আসেন আরএফএসের কয়েক জন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। মত্ত অবস্থার নিরঞ্জনবাবুর সঙ্গে তাঁরাও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই মত্ত ওই ব্যক্তি আচমকা তাঁদের মারধর করতে শুরু করেন। ঘটনায় দুই পুলিশকর্মী অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরেই পুলিশকে মারধরের অভিযোগে নিরঞ্জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, দু’টি ঘটনাতেই কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের উপরে হামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৫৩ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে হুমকি (৫০৬), ৫০ টাকা মূল্যের বেশি সম্পত্তি ধ্বংস (৪২৭) এবং সমবেত হামলার (৩৪) ধারাগুলি। পুলিশ জানিয়েছে, আইনের অন্য ধারাগুলি জামিনযোগ্য অপরাধ হলেও ৩৫৩ ধারাটি জামিন-অযোগ্য। এই ধারায় অভিযুক্তের দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা দু’টো সাজাই হতে পারে। অথচ অভিযোগ, অভিযুক্ত ওই তৃণমূল কাউন্সিলরকে গ্রেফতার তো দূর অস্ত্‌, জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। দুই ক্ষেত্রে দু’রকমের ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত এক জন তৃণমূল কাউন্সিলর হওয়ার কারণেই এমন ঘটেছে। তাঁকে গ্রেফতার করতে হলে উপরমহল থেকে অনুমতির প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement