Mysterious death

বিচ্ছেদ চেয়ে চাপ আসছিল, বধূর রহস্য-মৃত্যুতে ধৃত স্বামী-সহ চার

মালদহের ইংরেজবাজারের বাসিন্দা মাম্পির সঙ্গে বছর দুই আগে সমাজমাধ্যমে আলাপ হয় হরিদেবপুরের বাসিন্দা প্রণয় চন্দ্র নামে এক যুবকের। বছর দেড়েক আগে তাঁরা বিয়ে করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৫
Share:

মাম্পি দাস। ফাইল ছবি।

বাড়ির পুজোর জন্য মূর্তি কেনা থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রস্তুতি সাড়া হয়ে গিয়েছিল। সরস্বতী পুজোর সকালে আনাজ কিনতেও দেখা গিয়েছিল বধূকে। বৃহস্পতিবার, পুজোর সন্ধ্যায় সেই বধূরই দেহ মেলে ভাড়ার ফ্ল্যাট থেকে। মাম্পি দাস নামে বছর চব্বিশের ওই বধূর মৃত্যু আত্মহত্যা না কি খুন, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানায়, হরিদেবপুর থানা এলাকার বাসিন্দা ওই বধূর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে মৃতার স্বামী, শাশুড়ি, ননদ এবং ননদাইকে। ধৃতদের নাম প্রণয় চন্দ্র, কৃষ্ণা চন্দ্র, কেয়া মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ মণ্ডল।

Advertisement

জানা গিয়েছে, মালদহের ইংরেজবাজারের বাসিন্দা মাম্পির সঙ্গে বছর দুই আগে সমাজমাধ্যমে আলাপ হয় হরিদেবপুরের বাসিন্দা প্রণয় চন্দ্র নামে এক যুবকের। বছর দেড়েক আগে তাঁরা বিয়ে করেন। তার পর থেকে হরিদেবপুর থানার কৈলাস ঘোষ রোডের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকছিলেন ওই দম্পতি। অভিযোগ, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই পণের দাবিতে মাম্পির উপরে অত্যাচার শুরু করেন প্রণয়। বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেওয়া হত বলেও দাবি। ঘটনার সন্ধ্যায় প্রতিবেশীরা দেখেছিলেন, বধূকে ঘর থেকে অচৈতন্য অবস্থায় ধরাধরি করে বার করছেন মাম্পির ননদ কেয়া এবং ননদাই বিশ্বজিৎ।

জানা গিয়েছে, অচৈতন্য অবস্থায় বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মাম্পিকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরেই সেখান থেকে পালিয়ে যান অভিযুক্তেরা। হাসপাতাল থেকেই হরিদেবপুর থানায় ফোন করে বধূর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। শুক্রবার মাম্পির বাবা গৌতমকুমার দাস মেয়ের স্বামী, শাশুড়ি, ননদ এবং ননদাইয়ের বিরুদ্ধে হরিদেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে প্রথমেই মাম্পির ননদাই বিশ্বজিৎকে তাঁর মহেশতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে সকলের ফোন বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে মহেশতলা থেকে শুক্রবার রাতে এক জনকে এবং শনিবার সন্ধ্যায় মৃতার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশ জেনেছে, বিয়ের আগে নিজেকে ব্যাঙ্ককর্মী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন অভিযুক্ত যুবক। তাঁর মা-ও ব্যাঙ্ককর্মী বলে মাম্পিকে জানিয়েছিলেন তিনি। আদতে তাঁরা কিছুই করতেন না। যা নিয়ে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। লিখিত অভিযোগে বধূর পরিজনেরা জানিয়েছেন, বিয়ের সময়ে সোনার গয়না-সহ অনেক কিছুই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই টাকার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। মাম্পি রাজি না হলে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ। মাম্পি ও প্রণয়ের প্রায়ই ঝামেলা হত, জানান প্রতিবেশীরা।

মৃতার মা মালা দাস ফোনে বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজোর আগের দিন মাম্পি ফোন করে জানিয়েছিল, প্রণয় ওকে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য চাপ দিচ্ছে। ও আমাকে জানিয়েছিল, পুজোর দিন শাশুড়ি এবং ননদের সঙ্গে বসে কথা বলে মিটমাট করতে চায়। পরদিন সন্ধ্যায় ওর শাশুড়ি ফোন করে বলেন, ‘মাম্পি আত্মহত্যা করেছে। আপনারা যদি না আসেন, আমরা এখানে দাহ করে দেব’।’’ বধূর মৃত্যুতে সন্দেহ দানা বেঁধেছে প্রতিবেশীদের মনেও। একই আবাসনের বাসিন্দা ঝর্না চৌধুরী বলেন, ‘‘ফ্ল্যাট থেকে চেঁচামেচি শুনতাম। কয়েক দিন আগে কথার ফাঁকেই মাম্পি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, সংসারটা ভাঙতে বসেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ আসায় জানতে পারি, মাম্পির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশই আমাদের ওর ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। গিয়ে দেখি, ছোট সরস্বতীর প্রতিমা বসানো রয়েছে। বিছানাপত্র এলোমেলো।’’ অন্য এক প্রতিবেশীর দাবি, ‘‘আগেও এক বার বিয়ে হয়েছিল প্রণয়ের। সম্প্রতি অন্য সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।’’ এ কথা মাম্পিই জানিয়েছিলেন বলে প্রতিবেশীর দাবি।

সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের। ময়না তদন্তের পরে মাম্পির দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবারের হাতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement