আর কয়েক মিনিট দেরি হলে ট্রেন ছেড়েই দিত। হাও ড়া স্টেশনের ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখন দাঁড়িয়ে কলকাতা-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস। ট্রেনের বি২ কামরার ৬৫ ও ৬৬ নম্বর আসনে বসেছিলেন দুই মধ্যবয়সী ব্যক্তি। হঠাৎই তাঁদের সামনে হাজির ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর অফিসারেরা। ওই দু’জনের রাকস্যাক তল্লাশি করতেই বেরিয়ে পড়ল সাড়ে তিন কোটি টাকার সোনা। গ্রেফতার করা হয়েছে শচীন রাই এবং রাজেশ রায়কাবার নামে ওই দুই যুবককে। তাঁরা উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
ডিআরআই সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার বিকেলে। তাদের কাছে শেষ মুহূর্তে খবর আসে সোনা পাচারের। জানা যায়, নেপাল সীমান্ত টপকে ওই সোনা ঢুকেছে ভারতে। তা নিয়ে কলকাতা থেকে ট্রেনে দিল্লি যাচ্ছেন ভিন্ রাজ্যের দুই যুবক। এমনকী ট্রেন, কামরা এবং আসন নম্বরও পৌঁছে যায় ডিআরআই অফিসারদের কাছে। শেষ মুহূর্তে স্টেশনে হানা দেন তাঁরা। ডিআরআই অফিসারদের দেখে, অভিযোগ শুনে প্রথমে আকাশ থেকে পড়েন শচীন ও রাজেশ। অস্বীকার করেন সোনা রাখার কথা। তাঁদের নামিয়ে আনা হয় ট্রেন থেকে। ট্রেন ছেড়ে চলে যায় দিল্লি।
সূত্রের খবর, ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে ওই দুই যুবককে হো চি মিন সরণিতে ডিআরআই অফিসে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। সেখানে শচীনের জিম্মা থেকে উদ্ধার হয় ৭টি সোনার বার। প্রতিটির ওজন প্রায় ১ কিলোগ্রাম। আর রাজেশের সঙ্গে ছিল একই আকারের ৫টি সোনার বার। সব মিলিয়ে ওজন ১২ কিলোগ্রামের কিছু বেশি। উদ্ধার হওয়া সোনার বাজারদর সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি বলে ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
শনিবার ওই দুই যুবককে ব্যাঙ্কশাল আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয়। ডিআরআই অফিসারদের দাবি, প্রাথমিক জেরায় শচীন ও রাজেশ জানিয়েছেন, বড়বাজারের এক ব্যক্তি তাঁদের ওই সোনা দিল্লির এক জনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু, যাঁর কাছ থেকে তাঁরা সোনা পেয়েছেন এবং যাঁকে দেওয়ার কথা ছিল — ওই দু’জনেরই বিস্তারিত পরিচয় এখনও ধৃতদের কাছ থেকে জানা যায়নি।
শনিবার আদালতে ডিআরআই-এর আইনজীবী তাপস বসু আর্জি জানান, ধৃত দু’জনকে আরও জেরার প্রয়োজন রয়েছে। এর পরেই বিচারক শচীন ও রাজেশকে ২৩ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আদালত অনুমতি দিয়েছে, জেলে গিয়ে ডিআরআই অফিসারেরা ওই দু’জনকে জেরা করতে পারবেন। রবিবারই এক দফা জেরা করা হয়েছে শচীন ও রাজেশকে।