আলোকপর্ণা মিত্র। ছবি-ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
হাইল্যান্ড পার্কের অভিজাত আাবাসনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মনোবিদ আলোকপর্ণা মিত্রের মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার পুলিশ তাঁর স্বামী শৌমিক মিত্রকে গ্রেফতার করল। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় এদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়। বোন আলোকপর্ণার উপর মানসিক এবং শারীরিক নিগ্রহ চালায় শৌমিক এবং সেই কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন, এমনটাই শনিবার অভিযোগ করেছিলেন ভাই অর্ণব।
গত বৃহস্পতিবার ২৬ নভেম্বর, নিজের ফ্ল্যাটের বসার ঘরে সোফার উপর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় বছর পঞ্চাশের আলোকপর্ণাকে। আদতে চন্দননদরের বাসিন্দা আলোকপর্ণার বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। মনস্তত্ত্ব নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর তা নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। মানুষের মধ্যে জমে থাকা অবসাদ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কাউন্সেলিং ছিল তাঁর পেশা। আর তাঁর মধ্যেই যে আত্মহত্যার ইচ্ছে তৈরি হয়েছিল তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁর বন্ধু পরিজনরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করানো হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। পরের দিন সকালেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রাথমিক তদন্তের পর সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ ঘটনাটি আত্মহত্যার বলেই অনুমান করছে।
আরও পড়ুন-মেট্রো স্টেশনে মোবাইলে তরুণীর ভিডিয়ো তুলে পাকড়াও যুবক
আরও পড়ুন-পাতিপুকুরে বিদ্যুতের খুঁটিতে চড়ে ঘুমিয়ে পড়লেন যুবক, নাজেহাল পুলিশ-দমকল
তবে আত্মহত্যা বলে মানতে নারাজ তাঁর ভাই অর্ণব। তিনি সার্ভে পার্ক থানায় করা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা৪৪মিনিটে শৌমিকের ফোনে ঘটনাটি জানতে পারেন। অর্ণববাবুর অভিযোগ, সেই সময় শৌমিকের গলায় কোনও উত্তেজনা পর্যন্ত ছিল না। অর্ণববাবু তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, সোফায় অগ্নিদগ্ধ হল তাঁর বোন। অথচ অর্ধেক ভর্তি কেরোসিনের বোতল পাওয়া গেল রান্নাঘরে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেউ কি গায়ে আগুন দিয়ে বা কেরোসিন গায়ে ঢেলে বোতল সযত্নে রান্নাঘরে রেখে আসে? শৌমিকের প্রাথমিক বয়ান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অর্ণব বাবু। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রথমে ঘটনার পর শৌমিক দাবি করেছিলেন যে তিনি পাশের ঘরে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। চিৎকার শুনে বাইরের ঘরে বেরিয়ে ওই দৃশ্য দেখেন। পরে আবার শৌমিক দাবি করেন, তিনি আদৌ বাড়িতে ছিলেন না। দোকানে গিয়েছিলেন সিগারেট কিনতে। তদন্তকারী আধিকারিকরা বলেন, ‘‘আমরা সবক’টি দিকই খতিয়ে দেখছি।’’ অর্ণববাবুর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই শৌমিক বাবু মানসিক নির্যাতন চালাতেন বোনের উপর। তার জেরে বাড়ি ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন আলোকপর্ণা। কিন্তু তাঁর অফিস থেকে সেই জায়গা যাতায়াতের অসুবিধা হওয়ায় তিনি ফিরে আসেন বাড়িতে। শৌমিকের চাকরি সূত্রে রাজস্থান, দিল্লি এবং নাইজেরিয়ায় থাকা আলোকপর্ণা ঘটনার সন্ধ্যাতেও ফোনে কথা বলেন তাঁদের একমাত্র ছেলের সঙ্গে।