চাঁদনি চক থেকে অপহরণের ঘটনায় ধৃত অপহৃতই

বৃহস্পতিবারই চাঁদনি চকের একটি শপিং মলের কাছ থেকে সৌমেনকে অপহরণ করেন কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের তিন কনস্টেবল এবং বিএসএফের এক জওয়ান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৪
Share:

শনিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ধৃতদের তিন জন। নিজস্ব চিত্র

চাঁদনি চক থেকে অপহরণের ঘটনায় অপহৃত ব্যক্তিকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। কয়েক কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে শুক্রবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা সৌমেন বসুকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

বৃহস্পতিবারই চাঁদনি চকের একটি শপিং মলের কাছ থেকে সৌমেনকে অপহরণ করেন কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের তিন কনস্টেবল এবং বিএসএফের এক জওয়ান। ওই রাতেই বীরভূমের লাভপুর থেকে বৌবাজার থানা এবং লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার অফিসারেরা স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে সৌমেনকে উদ্ধার করে ওই চার জন-সহ মোট সাত জনকে গ্রেফতার করেন।

তদন্তকারীরা জানান, সৌমেনকে উদ্ধারের পরে অভিজিৎ ঘোষ, শ্যামল মণ্ডল, জাকির খান, মহম্মদ হানিফ, মনজারুল হক, সুলেমান শেখ ও আমির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এঁদের মধ্যে শ্যামল ও জাকির কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের কনস্টেবল। হানিফ রয়েছেন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশে। আমির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ান। অভিজিৎ ও শ্যামলের বাড়ি ইংলিশবাজারে। জাকির এবং সুলেমান বীরভূমের আহমেদপুরের বাসিন্দা। তদন্তে ধৃতরা দাবি করেন, সৌমেন দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বেকার যুবকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছিলেন সৌমেন। প্রতারিতদের মধ্যে ছিলেন শ্যামলের এক আত্মীয়। এক পুলিশকর্তা জানান, শুক্রবার ধৃতদের কলকাতায় নিয়ে আসার পরে অভিজিতের পরিবার বৌবাজার থানায় সৌমেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

ব্যাঙ্কশাল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি সোমা বিশ্বাস শনিবার জানান, দু’টি পৃথক মামলায় আট জনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক অপহরণের মামলায় ধৃত সাত জনকে ২২ অক্টোবর এবং প্রতারণার মামলায় ধৃত সৌমেনকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

তদন্তে জানা গিয়েছে, অপহরণের মূল চক্রী অভিজিৎ এবং মনজারুল। টাকার বিনিময়ে বেকার যুবকদের সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সৌমেনের হয়ে টাকা নিতেন অভিজিৎ। কিন্তু চাকরি না পেয়ে প্রতারিতেরা টাকা ফেরানোর জন্য অভিজিতের উপরে চাপ সৃষ্টি করলে তিনি শ্যামল এবং মনজারুলের সঙ্গে মিলে অপহরণের ছক কষেন পুজোর আগে। এলাকায় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত মনজারুল। ধৃতেরা প্রায় প্রত্যেকেই তাঁর ছাত্র। সেই সুযোগে তিনি জাকির খান, মহম্মদ হানিফ এবং আমির হোসেনকে নিয়ে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। স্থির হয়েছিল, সৌমেনের থেকে টাকা উদ্ধার হলে তার চল্লিশ শতাংশ তাঁরা ভাগ করে নেবেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিজিৎ সেই পরিকল্পনা মতো পুজোর আগে শ্যামল এবং জাকিরের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ট্রেনিং স্কুলে এক সঙ্গে থেকেছিলেন। কীর্ণাহারে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে পুজোর সময়ে ডিউটি ছিল রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল হানিফের। তিনি সেখান থেকেই সোজা কলকাতায় এসে অপহরণ-কাণ্ডে যোগ দেন। পরিকল্পনা মতো পুজো শেষ হতেই বৃহস্পতিবার সৌমেনকে কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়। এর পরেই চাঁদনি থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃত পুলিশকর্মীরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement