প্রতীকী ছবি।
ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। সেই সূত্রেই পাওয়া গেল মোবাইলের সিম কার্ড জালিয়াতির একটি চক্রের হদিস। পুলিশের দাবি, ব্যাঙ্ক জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই ওই সমস্ত ‘প্রি-অ্যাক্টিভেটেড’ সিম কার্ড ব্যবহার করা হত। চক্রের দুই চাঁইকে গ্রেফতার করার পরে এই তথ্য সামনে এসেছে বলে দাবি পুলিশের। এ রাজ্য থেকে সিম কার্ডগুলি পাঠানো হত জামতাড়ার জালিয়াতদের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় ‘জামতাড়া গ্যাং’-এর সঙ্গে এ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের যোগসূত্রের বিষয়টিও তদন্তে উঠে এসেছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনার তদন্তে নেমে ওই চক্রের দুই সদস্য পার্থ সাহা ও শিবশঙ্কর মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ। পার্থর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে, শিবশঙ্কর থাকে পূর্ব বর্ধমানের কালনায়। দু’জনের কাছ থেকে মোট ৭৪৮টি ‘প্রি-অ্যাক্টিভেটেড’ সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি সবই ভুয়ো নামে নথিভুক্ত করা। ধৃত দু’জনই মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থায় কাজ করত। তদন্তকারীরা জানান, ওই সমস্ত সিম কার্ড জালিয়াতেরা ব্যবহার করত গ্রাহকদের ফোন করার এবং ওটিপি পাওয়ার জন্য।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২০ জানুয়ারি পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসুদেবপুরের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, একটি মোবাইল সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে জানায়, কেওয়াইসি-র জন্য বিভিন্ন তথ্য দরকার। তার জন্য একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয় তাঁকে। ওই ব্যক্তি সেই অ্যাপ ডাউনলোড করেন এবং নিজের সব তথ্য ফোনে জানিয়ে দেন। তার পরে দেখেন, তাঁর পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারকেরা সাড়ে ২০ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছে। তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্য ব্যবহার করেই জালিয়াতেরা তাঁর ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত ফোন নম্বরটি বদলে দিয়েছিল। যাতে টাকা তোলার জন্য ওটিপি সেই নতুন নম্বরে আসে।
তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা দেখেন, ওই পাঁচটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নতুন পাঁচটি ফোন নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। সেই সমস্ত নম্বর নিয়ে কাটাছেঁড়া করলে দেখা যায়, হালিশহর থেকে কেউ ওই নম্বরগুলিতে একাধিক বার যোগাযোগ করেছে। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই ব্যক্তির ফোনে ঘন ঘন সিম কার্ড বদলে যাচ্ছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ওই পাঁচটি নম্বরের সূত্র ধরে কোথা থেকে কোন নম্বরে ফোন এসেছে, কারা ফোন করেছে, সব কিছু খতিয়ে দেখতে থাকি। তাতেই পার্থ সাহার নাম জানা যায়। এর পরে শুক্রবার সেখানে হানা দিয়ে তাকে ধরা হয়। তাকে জেরা করেই শিবশঙ্করের হদিস মেলে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, পার্থ ও শিবশঙ্করের কাজ ছিল সিম কার্ড জোগাড় করা। পরে সেই সিম তারা দিত জালিয়াতদের। গ্রাহকদের ফোন করা এবং তাঁদের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ফোন নম্বর বদলানোর জন্যই ব্যবহার করা হত ওই সিম কার্ড, যাতে ওটিপি সেখানেই আসে। ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় বসে থাকা জালিয়াতদের ওই সিম কার্ড সরবরাহ করত দুই ধৃত। তাদের জেরা করে চক্রের বাকিদের খোঁজ শুরু হয়েছে।