ব্যবস্থা: রবীন্দ্র সরোবরে ছটের পুণ্যার্থীদের ঢুকে পড়া আটকাতে গেটে ব্যারিকেড। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
ফের একাধিক পরীক্ষার মুখে পুলিশ! ছটে দুই সরোবরকে যেমন রক্ষা করতে হবে, তেমনই শহর জুড়ে ছটপুজোর জন্য তৈরি বিকল্প জলাশয় এবং ঘাটগুলিতে নিরাপত্তার বন্দোবস্তও করতে হবে। দূষণ রোধে সেখান থেকে পুজোর সামগ্রী দ্রুত সরিয়ে ফেলার বিধি পালন করা হচ্ছে কি না, তা যেমন দেখতে হবে, তেমনই আটকাতে হবে পথে বেরিয়ে ট্র্যাফিক বিধি-ভঙ্গের প্রবণতা। এ ছাড়া, নিষিদ্ধ বাজির তাণ্ডব রোখার মতো বড় পরীক্ষা তো রয়েইছে! থামাতে হবে রাতভর তারস্বরে বাজতে থাকা মাইক এবং সাউন্ড বক্সের অত্যাচারও।
কিন্তু আজ, রবিবার দুপুর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এত পরীক্ষায় কি পাশ করবে পুলিশ? কালীপুজোর মতো এ ক্ষেত্রেও ‘লাল কালি’র দাগ পড়বে না তো? প্রস্তুতির খতিয়ান তুলে ধরে শুক্রবার লালবাজার জানিয়েছিল, ছট উপলক্ষে শহরে সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকছেন। ডিসি পদমর্যাদার অফিসার থাকছেন ৩৫ জন। ৭৭টি ডিএমজি দল রাখা হচ্ছে। রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবর সামলাতে রাখা হচ্ছে মোট ৫০০ জন পুলিশকর্মীকে (দু’টি সরোবরে ২৫০ জন করে)। এক জন করে ডিসি পদমর্যাদার অফিসার নেতৃত্ব দেবেন দুই সরোবরে। সব রকম অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কড়া হাতেই সবটা সামলানো হবে, জানিয়েছে লালবাজার।
যদিও অনেকেই সংশয়ী এই ধরনের উৎসবে পুলিশ-প্রশাসনের বুঝিয়ে ‘কার্যোদ্ধারের’ প্রবণতা নিয়ে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে তাঁদের দাবি, ২০১৯-এ সরোবরের গেট ভেঙে ঢুকে পড়েছিল পুজোমুখী জনতা। সে বার কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। ২০২০ সালে করোনার কারণে তেমন কিছু না ঘটলেও ২০২১ সালে রবীন্দ্র সরোবরে জনতা জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। গেট লক্ষ্য করে জনতার তরফে দেদার ইটবৃষ্টিরও অভিযোগ ওঠে। নানা মহলে পুলিশের সমালোচনা হয় দর্শকের ভূমিকা পালনের জন্য। গত বছর দুই সরোবরকে বাঁচানো গেলেও বাজি এবং সাউন্ড বক্সকে জব্দ করতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছিল পুলিশ। ছটপুজোর সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত যত বেড়েছিল, ততই মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল শব্দতাণ্ডব। বিকল্প ঘাট এবং জলাশয়গুলিতেও নজরদারি চোখে পড়েনি বলেই অভিযোগ।
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক অবশ্য শনিবার বলেন, ‘‘আজ সন্ধ্যা থেকেই শহরের দখল নিয়েছে ছটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশবাহিনী। রবিবার, ছটের সন্ধ্যার আগেই পথে নেমে পড়বেন প্রায় চার হাজার পুলিশকর্মী। দুই সরোবরই ঘিরে ফেলা হচ্ছে। কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না।’’
এ দিন রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, ১২টি বড় গেটের সামনে বাঁশের কাঠামো বাঁধা হয়েছে। পাশেই টাঙানো বিজ্ঞপ্তিতে লেখা, ‘শনিবার রাত ১০টা থেকে সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সরোবর বন্ধ থাকবে’। সুভাষ সরোবরে টাঙানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সোমবার দুপুর ২টো পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সরোবর। অর্থাৎ, রবীন্দ্র সরোবরের চেয়েও বেশি সময় এই সরোবর বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে সুভাষ সরোবরে লোহার গ্রিলের বাইরে টিন লাগানো হলেও কিছু জায়গায় ফাঁক রয়ে গিয়েছে এ দিন দুপুরেও। সেখান দিয়েই যাতায়াত স্নান করতে আসা লোকজনের। এক নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ‘‘সন্ধ্যার আগে সব ঢেকে দেওয়া হবে। তখন থেকেই তো পুলিশের হাতে চলে যাবে সরোবর।’’
সূত্রের খবর, এ বছর কলকাতা পুর এলাকায় ছটের জন্য কেএমডিএ-র ৪২টি ঘাট, পুরসভার গঙ্গার ঘাট এবং কৃত্রিম পুকুর মিলিয়ে ১২১টি ঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরের আশপাশে থাকছে আরও ২৩টি কৃত্রিম জলাশয়। জলাশয়ের পাশে শৌচাগার, পোশাক বদলের জায়গা, পর্যাপ্ত আলো ও পুজোর উপকরণ ফেলার পাত্র রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন ঘাটে নিরাপত্তার জন্য ডুবুরি ও নৌকার ব্যবস্থাও থাকছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর নৌকায় টহল দেবে।