সেই পুকুরের পাশেই লেদার কমপ্লেক্স থানা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র
আসামিকে থানার লকআপে ঢোকানো মাত্রই বমি করে ফেলেছিলেন তিনি। যার কারণ, সংলগ্ন পুকুর থেকে বেরোনো দুর্গন্ধ। ঘটনাটি মাস ছয়েক আগের হলেও, সেই অবস্থার যে কোনও পরিবর্তন হয়নি সে কথাই শোনাচ্ছিলেন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশকর্মীরা। কথা বলতে বলতেই নাকে রুমাল চেপে ধরছিলেন উপস্থিত সকলে।
কেন পুকুর থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে? স্থানীয় সূত্রের খবর, থানা সংলগ্ন বিশাল জলাশয়ে চর্মনগরীর দূষিত জল মেশায় এই অবস্থা। যার জেরে নাজেহাল হচ্ছেন সংলগ্ন থানার পুলিশ এবং সেখানে আসা সাধারণ মানুষ।
বানতলা থেকে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে কিছুটা এগোতে ডান দিকে পড়ে এই কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা। ২০০২ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভোজেরহাটের কড়াইডাঙায় তৎকালীন রাজ্য পুলিশের আওতায় এই থানা চালু হয়। ২০১৭ সালে ওই থানা কলকাতা পুলিশের অধীনে আসে।
থানা লাগোয়া প্রায় ৪-৫ বিঘা জায়গা জুড়ে একটি জলাশয় রয়েছে। তাতেই চর্মনগরীর জল ঢুকে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। পুকুরের জল যে কতটা দূষিত হয়ে গিয়েছে, তা বোঝা যায় একটি ঘটনা থেকেই। পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, কয়েক মাস আগে দু’টি কুকুরছানা পুকুর পাড়ে খেলছিল। তখনই একটি ওই জলাশয়ে পড়ে যায়। কোনও ক্রমে সে জলাশয় থেকে উঠে এলেও দিন কয়েকের মধ্যেই পায়ে পচন শুরু হয়। এর মাসখানেকের মধ্যেই মারা যায় কুকুরটি। থানার এক সাব ইনস্পেক্টর বলেন, ‘‘এই জলাশয়ে এক সময়ে মাছ চাষ হত। গত কয়েক বছরে জল এতই বিষিয়ে গিয়েছে যে মাছ চাষের প্রশ্নই ওঠে না।”
পরিবেশকর্মীদের কথায়, ‘‘ওই জলাশয়ে যদি চর্মনগরীর জল মিশে থাকে, তবে দ্রুত সেই জল ছেঁচে তুলতে হবে। শুধু তাই নয়, মাটিও বিশেষ প্রক্রিয়ায় দূষণমুক্ত করতে হবে। তবেই ওখানে আবার মাছ চাষ করা সম্ভব। জল ও মাটি পরিশোধন না করলে ওই পুকুরে কোনও জলজ প্রাণী বাঁচবে না।” থানার এক আধিকারিক বলেন, “দূষিত জল তুলে ফেলে দিয়ে জলাশয়টি আবার মাছ চাষের যোগ্য করার ব্যাপারে পুকুরের মালিকের সঙ্গে কথা বলব।’’
এত বড় জলাশয়ের জল দীর্ঘদিন ধরে দূষিত হওয়া সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? বানতলা চর্মনগরীর ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ জুনেজার দাবি, ‘‘ওই জলাশয়ের সঙ্গে বানতলা চর্মনগরীর কোনও সংযোগ নেই। আমাদের ট্যানারির জল বিজ্ঞানসম্মত ভাবে শোধন করে অন্যত্র ফেলা হয়।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘হতে পারে ওই জলাশয়ে তপসিয়া বা ট্যাংরা এলাকার ট্যানারির জল মিশছে।’’
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘ওই থানা সংলগ্ন জলাশয়ের জল কেন বিষাক্ত হচ্ছে, সেটা আগে দেখতে হবে। ট্যানারির জল যদি জলাশয়ে ঢুকে থাকে, তা দ্রুত শোধন করতে মালিকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’