১১টা পর্যন্ত জলসা, কান বন্ধ পুলিশের

স্টেজের পিছনেই একটি ক্লাব। কালীপুজোর উদ্যোক্তা ওই ক্লাবই আয়োজন করেছে জলসার। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, এলাকাবাসীর মনোরঞ্জনের জন্য এই অনুষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকাংশের অবশ্য সেই মনোরঞ্জনের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড়।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

পাড়ার গলি নয়। বড় রাস্তা তো বটেই, একেবারে রাজপথ— আশুতোষ চৌধুরী অ্যাভিনিউ। ঘড়ির কাঁটা রাত ১১টা পেরোনো মানে গাড়ি কম, দোকানপাট বন্ধ, লোকজনও খুব
কম। বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে ওই ব্যস্ত রাজপথও তাই শান্ত, নিস্তব্ধ, সুনসান থাকবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু থাকছে না। থাকতে দিচ্ছে না সেই নাচগানের অনুষ্ঠান বা জলসা। ডজন খানেক সাউন্ড বক্স কাঁপিয়ে দিচ্ছে গোটা তল্লাট।

Advertisement

রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙেচুরে দিচ্ছে তারস্বরে চলা হিন্দি গান। পুরুষ ও নারী কণ্ঠে। শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল গুরুসদয় মোড় পেরোনোর একটু পর থেকেই। কিন্তু শনিবারের অনুষ্ঠানস্থল, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ওই পার্কের কাছাকাছি পৌঁছতে ব্যাপারটা আর মামুলি আওয়াজের পর্যায়ে থাকল না। মাটি কাঁপতে শুরু করল। শব্দ তখন ধাক্কা মারছে বুকে। পুরসভার ওই পার্কের ভিতরে স্টেজ তৈরি করে চলছে জলসা। স্টেজে দ্বৈতকণ্ঠে হিন্দি গান, জগঝম্প যন্ত্রসঙ্গীত সহকারে। তালে তালে নেচে চলেছেন স্টেজের নীচে একদল তরুণ-তরুণী। দর্শক প্রায় পাঁচশো।

স্টেজের পিছনেই একটি ক্লাব। কালীপুজোর উদ্যোক্তা ওই ক্লাবই আয়োজন করেছে জলসার। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, এলাকাবাসীর মনোরঞ্জনের জন্য এই অনুষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকাংশের অবশ্য সেই মনোরঞ্জনের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড়।

Advertisement

জলসা যখন ভাঙল, তখন সওয়া ১১টা বেজে গিয়েছে। অর্থাৎ মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজানোর যে নির্ধারিত আইনি সময়সীমা, রাত ১০টার পরে আরও সওয়া এক ঘণ্টা বেআইনি ভাবে চলেছে শব্দযন্ত্র। এমনকী, ওই তল্লাটে মাইক বা সাউন্ড বক্সের শব্দমাত্রার সীমা খুব বেশি হলে ৬৫ ডেসিবেল। সেই সীমারও তোয়াক্কা করা হয়নি।

অথচ জলসা চলার সময় পার্কের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কলকাতা পুলিশের দুই কনস্টেবল। বেআইনি কাজ হচ্ছে বলে বাধা দেওয়ার জন্য নয়, তাঁদের মোতায়েন করা হয়েছিল জলসা ঘিরে যাতে গন্ডগোল না হয়, সেটা দেখতে। আইনরক্ষকদের সামনে এই ভাবেই জলসা চলল আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

ওই জায়গা গড়িয়াহাট থানার মধ্যে। কেন তাঁরা ব্যবস্থা নিলেন না?

লালবাজারের এক কর্তার সাফ কথা, ‘‘আইন তো অনেক রকম আছে খাতায়-কলমে। তবে সব জায়গায় কি আর আইন প্রয়োগ করা যায়? বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে হয়।’’ তাঁর যুক্তি, পাঁচশো মানুষ জড়ো হয়েছেন, এমন অবস্থায় অনুষ্ঠান বন্ধ করতে গেলে গোলমাল বেধে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারত।

কিন্তু পুলিশের অন্যতম কাজ তো সাধারণ মানুষ যাতে শান্তি-স্বস্তিতে থাকতে পারেন, সেটাই নিশ্চিত করা। প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে এ বার প্রতিটি থানাকে শব্দ মাপার যন্ত্র ও শব্দ নিয়ন্ত্রক বা সাউন্ড লিমিটার দেওয়া হয়েছে। মাইক বা সাউন্ড বক্সে সাউন্ড লিমিটার লাগিয়ে দিলে নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার চেয়ে আওয়াজ কিছুতেই বাড়বে না। দ্বিতীয়ত, অনুষ্ঠান বন্ধ করতে পদক্ষেপ না করলেও আয়োজক ক্লাব বা সংস্থার বিরুদ্ধে ক্যালকাটা সুবার্বন পুলিশ অ্যাক্টের ১৭-ডি ধারায় আইনি ব্যবস্থা নিতে থানাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন খোদ পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। একই সঙ্গে মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তার পরেও সেই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে না কেন?

লালবাজারের ওই অফিসার বলেন, ‘‘সাউন্ড লিমিটার ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও বাস্তব অসুবিধাটা বুঝতে হবে। সব জায়গায় ওই পদক্ষেপ আমরা করতে পারি না।’’ কিন্তু অনুষ্ঠানের পরে তো আয়োজকদের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ মতো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়? যদিও বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ওই অনুষ্ঠানের পরে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ সেটাও করেনি। ওই পুলি‌শকর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেলেই এমনটা করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement