কুয়াশায় ঢাকা ইএম বাইপাস। —ফাইল চিত্র।
প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তাই যেন মরণফাঁদ! ইএম বাইপাস নিয়ে তাই নাজেহাল কলকাতা পুলিশ। এমনকি, বাইপাসের দুর্ঘটনা নিয়ে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকেও উদ্বেগের সুর শোনা গিয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। কারণ, গত দু’মাসে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেছে ওই রাস্তায়। নজরদারি বাড়িয়ে বা গার্ড রেল বসিয়েও যা আটকানো যায়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত দু’মাসে বাইপাসের পথ-দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা পুলিশ-নিয়ন্ত্রিত অংশে মামলা রুজু হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার গাড়ি বা মোটরবাইকের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে গত দেড় মাসে মাত্রাতিরিক্ত গতির কারণে রুজু হওয়া মামলার সংখ্যা ২২,৭৪১টি। গত অক্টোবরে মামলা হয়েছিল ১৫,২৬২টি।
এত মামলা হওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায় না কেন? পুলিশের একটি বড় অংশের দাবি, বাইপাসের মতো চওড়া রাস্তা রাতের দিকে ফাঁকা হয়ে গেলে অনেকেই ঝোড়ো গতি তুলে অন্য গাড়িকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সিগন্যাল লঙ্ঘনের প্রবণতাও বাড়ে তখন। স্টিয়ারিংয়ে বসে অনেকেই কথা বলতে থাকেন মোবাইলে। এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় বাইপাসে এমনিতেই গাড়ির গড় গতি থাকে ষাটের উপরে। তখন বাইপাসের সংযোগকারী বিভিন্ন রাস্তা থেকে বেরোনোর সময়ে অনেকেই ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানেন না। যার জেরে ঘটে দুর্ঘটনা।’’ দুর্ঘটনা কমাতে নজরদারি বাড়ানো হয় সম্প্রতি। এমনকি, আরও বেশি করে গাড়ির গতি মাপার স্পিড গান ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয় পুলিশের তরফে। যদিও এর পরেও নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে নিত্যযাত্রীদের একাংশের পক্ষ থেকে।
তবে বাইপাসের দুর্ঘটনা যে মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তা বাড়িয়েছে, তা শোনা গিয়েছে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘চিংড়িঘাটায় রোজ দুর্ঘটনা ঘটে কেন?’’ এর পরেই তিনি নির্দেশ দেন, ‘‘আর একটাও দুর্ঘটনা যেন না হয়।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরেই কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ যৌথ ভাবে পরিদর্শন করে চিংড়িঘাটা এলাকা। কেন এত দুর্ঘটনা হচ্ছে, খতিয়ে দেখে তারা।
যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, বাইপাসের দুর্ঘটনা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হল মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো। গাড়িচালক ও পুলিশকর্মীদের অনেকেরই দাবি, করোনার জেরে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা বন্ধ থাকায় মত্ত
হয়ে গাড়ি চালানোর প্রবণতা হঠাৎ বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে ওই যন্ত্রের ব্যবহার ফের শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে পুলিশের দাবি। অনেকের আবার বক্তব্য, গত মাসে টানা
বৃষ্টিতে রাস্তায় খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় তা থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। ‘হটমিক্স’ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও তা ধুয়ে গিয়েছে।
চতুর্থীর রাতে বাইপাসে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন বেপরোয়া গতিতে চলা একটি মোটরবাইকের চালক। রাতে স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। দু’জনের মাথাই ছিল হেলমেটহীন। বাইকটি রাস্তার ডিভাইডারে এত জোরে ধাক্কা মারে যে, ধড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায় চালকের। কোনও মতে বেঁচে যান তাঁর স্ত্রী। পুলিশের অনুমান, সেই সময়ে বাইকটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি। দিন কয়েক আগেই আবার চিংড়িঘাটা মোড়ের কাছে একটি গাড়ি পর পর ছ’জনকে ধাক্কা মেরে এক পথচারীকে পিষে দেয়। জানা যায়, চালককে পাশে বসিয়ে অপটু হাতে স্টিয়ারিং ধরেছিলেন গাড়ির মালিক। এমন ঘটনার অবশ্য অন্ত নেই। রাতের পাশাপাশি দিনের শুরুতেও ওই রাস্তায় এমন একাধিক ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।
আগামী কয়েক মাসে কুয়াশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশের। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার দাবি, ‘‘অন্য সব কিছুর সঙ্গে স্পিড গানের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। দুর্ঘটনার সংখ্যা কী ভাবে কমিয়ে ফেলা যায়, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাইপাসে অতিরিক্ত কর্মী নামিয়ে নজরদারির পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’