সাময়িক: সকালের ভিড়ের এই ছবি দেখা যায়নি সারা দিন। শুক্রবার, কালীঘাটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ভিড়ের আশায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায়ীরা। হালখাতার জন্য লক্ষ্মী-গণেশের পুজো করতে কালীঘাট মন্দিরের আশপাশের গলিতে রাত থেকেই শামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু কোথায় পুণ্যার্থী! কোথায় মন্দিরের দরজায় উপচে পড়া সেই দীর্ঘ লাইন!
সংক্রমণ প্রতিরোধে গত দু’বছর বৈশাখের প্রথম দিন কড়া বিধিনিষেধ বলবৎ ছিল। এ বার বিধিনিষেধ নেই। তবু নববর্ষের দিন কালীঘাট মন্দিরে পুণ্যার্থীর সংখ্যা তুলনায় অনেক কম ছিল বলেই দাবি ব্যবসায়ী থেকে পুলিশ, সব পক্ষের। শনি ও মঙ্গলবার মন্দির চত্বরে যেমন ভিড় হয়, নববর্ষের সকালেও তেমনটাই ছিল। সকালের দিকের সেই ভিড়টাই যেটুকু সারা দিনের আয় জুগিয়েছে পান্ডা আর ব্যবসায়ীদের। বাকি সময়ে যত বেলা গড়িয়েছে, ততই পুণ্যার্থীর সংখ্যা কমেছে মন্দির চত্বরে।
অথচ, মাস চারেক আগেও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি কালীঘাট মন্দিরে উপচে পড়েছিল পুণ্যার্থীদের ভিড়। ভোর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মন্দিরের চারপাশে ছিলেন অসংখ্য মানুষ। সেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছিলেন লালবাজারের পুলিশকর্তা এবং কর্মীরা। ভিড় সামলাতে সেই সময়ে কমব্যাট বাহিনীও নামাতে হয়েছিল।
সেখানে এ দিনের এমন পরিস্থিতি পান্ডা ও ব্যবসায়ীদের কাছে অপ্রত্যাশিত বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। শামিয়ানা খাটিয়ে যজমানের আশায় বসে থাকা পান্ডাদের অধিকাংশই ভোর ভোর এসেছিলেন। এক-এক জন সকালে পাঁচ-ছ’জন করে যজমান পেলেও বাকি সময় হাত গুটিয়েই থেকেছেন। বেলা যত গড়িয়েছে, তাঁদের গলার স্বরও অনেকটা নীচে নেমেছে। ভাবটা ছিল, পুণ্যার্থী পেলেই হবে, দরদামের বালাই নেই। স্বাভাবিক সময়ে বৈশাখের প্রথম দিন পুজো দিয়ে ১০০০-১৫০০ টাকা দক্ষিণা চেয়ে বসতেন পান্ডারা। এক পান্ডার কথায়, ‘‘এ বার উঁচু গলায় চাওয়ার পরিস্থিতিই নেই। ৫০-১০০ টাকা দক্ষিণা পেয়েও পুজো করেছেন অনেকেই। দরাদরি করলে ওটুকুও মিলত না।’’
এ দিন দেখা গেল, মন্দিরের দুই এবং পাঁচ নম্বর গেটে পুণ্যার্থীদের ছোট ছোট লাইন। ভিড় সামলাতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের তেমন হেলদোলও নেই। কেউ মোবাইলে গেম খেলছেন। না হলে ফোনে গল্প করছেন। চার নম্বর গেটে বেরিয়ে যাওয়ার পথ প্রায় ফাঁকাই ছিল। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ভিড় একদমই নেই। মন্দির সংস্কার হচ্ছে। চার দিকে ভাঙাচোরা অবস্থা। নানা জায়গায় লোহার ব্যারিকেড দেওয়া রয়েছে। প্রবেশ ও বেরোনোর জায়গা কম বলে যা একটু ভিড় চোখে পড়ছে।’’
ভিড় না দেখে সকালেই ফুল ও প্রসাদের ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। লোক দেখলেই হাঁকাহাঁকি করে খরিদ্দার ধরার অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কারণ, বিক্রির আশায় দোকানে স্তূপীকৃত করা হয়েছিল প্রসাদ ও ফুল। অথচ ক্রেতা নেই। এক ফুল ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রসাদ না হয় এক-দু’দিন রাখা যাবে। কিন্তু জবা ও রজনীগন্ধার মালা! সে সব তাজা রাখার চেষ্টায় সেই ভোর থেকে জল ছিটিয়েই চলেছি।
সকালের দিকে ভিড় কিছুটা হওয়ায় যেটুকু বিক্রি হয়েছে। যা পড়ে আছে, সে সব শুকিয়ে গেলে টাকাও নষ্ট। ১০ টাকায় জবার মালা বিক্রির জন্য চিৎকার করতে করতে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।’’
এমন পরিস্থিতি কেন? কারও মতে, টানা দু’বছর ধরে ব্যবসায় মন্দা চলছে, কাজ হারিয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক বেহাল দশা ভিড় না হওয়ার বড় কারণ। কারও মতে, অগ্নিমূল্যও আর এক কারণ হতে পারে। আবার এ-ও শোনা গেল, গরমে হয়তো মানুষ বেরোতে চাইছেন না।