দূষণ: পরিবেশবান্ধব পুজো মণ্ডপে দেখা মিলবে না এমন দৃশ্যের। ফাইল চিত্র
প্রসাদ থেকে শুরু করে দুপুরের খাওয়া, পুরোটাই শালপাতায়। এমনকি বাড়িতে ভোগও পাঠানো হবে মাটির সরায়। ওঁদের পুজো মণ্ডপে প্লাস্টিকের প্রবেশ নিষেধ। পুজোয় প্লাস্টিকের থালা-বাটি ব্যবহার না করে শালপাতা ব্যবহারের জন্য যে সচেতনতার প্রচার শুরু হয়েছে, তাতে এ শহরের কয়েকটি ক্লাব সাড়া দিয়েছে। পুজোয় এ বার সেই ক্লাবগুলি কোনও কাজেই প্লাস্টিক ব্যবহার করবে না। পাশাপাশি, একটি পুজোর উদ্যোক্তারা ঠিক করেছেন অঞ্জলির ফুল-পাতার বর্জ্য দিয়ে সার তৈরি করবেন তাঁরা।
দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক বর্জন করে ইতিমধ্যেই নজির সৃষ্টি করেছে বাঙুর অ্যাভিনিউ। পুজোয় সেই একই দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন বলে দাবি বাঙুরের একটি পুজো মণ্ডপের কর্মকর্তা অতীন রায়। তিনি জানান, বাঙুরের কোনও পুজো মণ্ডপে প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে না। শালপাতার থালা, বাটিতেই কাজ সারা হবে। শুধু তা-ই নয়, মণ্ডপে যে ফুল ব্যবহার হয়, তা আগে বড় বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে আনা হত। এ বার তার জায়গায় কাপড়ের বস্তা ব্যবহার করা হবে। অতীনবাবু বলেন, ‘‘তবে এখানে দুর্গাপুজো উপলক্ষে এত বেশি মানুষ খাওয়াদাওয়া করেন যে, পর্যাপ্ত শালপাতা অনেক সময়ে থাকে না। তখন থার্মোকলের থালা-গ্লাস ব্যাবহার করা হবে। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে প্লাস্টিকের বাসন ব্যবহার করা হবে।’’
মিল্ক কলোনি এলাকার এলআইজি দুর্গোৎসব কমিটির পুজো কর্মকর্তারা জানালেন, তাঁরা দেখেছেন পুজোর অঞ্জলির কাজে প্রচুর ফুল, বেলপাতা জঞ্জালে পড়ে নষ্ট হয়। পুজোর পরে ঠিক সময়ে সেগুলি সাফ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই জঞ্জালের স্তূপ হয়ে যায়। একটি সংস্থার সহযোগিতায় তাঁরা ফুল ও বেলপাতা থেকে সার তৈরি করবেন। ওই পুজোর এক কর্মকর্তা কৃষ্ণকান্ত মিত্র বলেন, ‘‘আমরা ভোগ বা প্রসাদ বিতরণের ক্ষেত্রে শুধু শালপাতার থালা-বাটিই ব্যবহার করব। শুধু তা-ই নয়, মানুষকে জলও খেতে দেওয়া হবে মাটির গ্লাসে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কাগজের গ্লাসও ব্যবহার হবে।’’
মণ্ডপে থিম তৈরি করার সময়েই যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল সমিতির পুজোর কর্মকর্তারা। তাঁরা জানালেন, থিম বানাতে গিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিবর্তে তাঁরা পলি ভিনাইল কার্বন নামে এক ধরনের উপকরণ ব্যবহার করছেন। ওই ক্লাবের তরফে অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘মাটির সরায় ভোগ দিচ্ছি। এতে খরচ বাড়লেও আমাদের পুজোমণ্ডপ পরিবেশবান্ধব থাকবে।’’
সম্প্রতি কেরলে ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেল। বন্যার জল নামার পরে দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের বোতাল থেকে শুরু করে থালা-বাটি, নিকাশি নালায় আটকে ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে কেরলের মানুষ যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে সচেতন হতেন, তা হলে বন্যার ভয়াবহতা কিছুটা কম হত। তাদের মতে কলকাতাতেও বর্ষায় যে ভাবে জল জমে, তাতে প্লাস্টিক যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই মঙ্গল।
পরিবেশবান্ধব মণ্ডপ তৈরির এই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘শুধু শালপাতার থালা কেন, কাগজের প্লেটের উপরেও কলাপাতা সাঁটিয়ে থালা-বাটি তৈরি হতে পারে। আমরা এই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন মণ্ডপে লিফলেট বিলি করছি। ফ্লেক্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।’’