NRS Medical College and Hospital

NRS Medical college: রঙিন প্লাস্টিকের আড়ালে জতুগৃহ হাসপাতাল

এন আর এসের জরুরি বিভাগের গেট দিয়ে ঢুকে সোজা এগোলেই ডান দিকে পড়বে বড় জলাশয়। তার চারপাশে প্লাস্টিক দিয়ে ছাউনি করে পর পর অস্থায়ী গুমটি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৮:২৯
Share:

বিপদ-বাস: এন আর এস চত্বরে প্লাস্টিকের ছাউনিতেই রাত্রিবাস রোগীর আত্মীয়দের। ছবি: সুমন বল্লভ

হাসপাতালে আগুন লেগে যাওয়ায় সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জন রোগীর। মহারাষ্ট্রের সেই ঘটনার পরেই এ রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিতে জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার অডিটের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু খাস কলকাতার সরকারি হাসপাতালের রাতের ছবি কি সেই ফায়ার অডিটে ধরা থাকবে? যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতাল চত্বর
জুড়ে ছড়িয়ে আছে রং-বেরঙের প্লাস্টিকের ‘জতুগৃহ’!

Advertisement

আতঙ্কিত রোগীর পরিজনদের একাংশেরও বক্তব্য, ‘‘সার দিয়ে থাকা প্লাস্টিকের ওই অস্থায়ী গুমটিতে কোনও ভাবে আগুন লেগে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। তার দায় কে নেবে?’’ অস্থায়ী ওই সব গুমটি কাদের? উত্তর একটাই, রোগীর পরিজনেদের। সেখানেই রাত কাটান তাঁরা। রাত নামতেই শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল চত্বর জুড়ে দেখা যায় এমন অসংখ্য ছাউনি। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে প্লাস্টিকের ছাউনি থাকা অনুচিত। বার বার এ নিয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু প্রবণতা কিছুতেই বদলাচ্ছে না।’’ সম্প্রতি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এসএসকেএম হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল এমনই জতুগৃহ।

Advertisement

এন আর এসের জরুরি বিভাগের গেট দিয়ে ঢুকে সোজা এগোলেই ডান দিকে পড়বে বড় জলাশয়। তার চারপাশে তাকালেই চোখে পড়ে প্লাস্টিক দিয়ে ছাউনি করে চার দিক ঘিরে পর পর অস্থায়ী গুমটি। এমনই একটি গুমটিতে শুয়ে থাকা বাঁকুড়ার জামিরুদ্দিন খান বললেন, ‘‘আগে খোলা আকাশের নীচেই প্লাস্টিক পেতে থাকতাম। মোবাইল চুরি হয়ে যাওয়ার পর থেকে রাতে দড়ি দিয়ে চার দিকে প্লাস্টিক টাঙিয়ে ঘর বানিয়ে নিয়েছি।’’ অথচ এন আর এসে রোগীর পরিজনদের জন্য তৈরি চারতলা রাত্রিনিবাসে শয্যা রয়েছে ৯৬টি। ২৪ ঘণ্টার জন্য মাথাপিছু ভাড়া ৭৫ টাকা। তবুও সকলে সেখানে যেতে চান না। কেন? কারণ হিসাবে অধিকাংশেরই দাবি, রোজ ৭৫ টাকা খরচ করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।

সমস্যা রয়েছে বহিরাগতদের নিয়েও। যেমন, এন আর এসের বহির্বিভাগের ভবনের পাশেই প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে মোবাইলে সিনেমা দেখছিলেন মুর্শিদাবাদের ইলিয়াস। কে ভর্তি, জানতে চাইতেই দাবি করলেন তাঁর বোন ভর্তি আছেন। কিন্তু কোন ওয়ার্ডে, তা জানেন না বলেই দাবি ওই যুবকের। এন আর এস হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক শান্তনু সেন বললেন, ‘‘প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে থাকাটা কাম্য নয়। রাত্রিনিবাসে ও হাসপাতাল চত্বরে যাতে রোগীর পরিজনেরা থাকতে পারেন, সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। পুজোর মরসুমে মানবিকতার খাতিরে প্লাস্টিক টাঙিয়ে থাকা নিয়ে কিছু বলা হচ্ছিল না। পুলিশ আবার অভিযান চালাবে। পরিজনদের জন্য আর একটি আশ্রয় তৈরির
বিষয়েও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে।’’

একই অবস্থা এসএসকেএম হাসপাতালেরও। বহির্বিভাগের ভবনের নীচে স্টিলের রেলিংকে খুঁটি বানিয়ে পর পর রয়েছে প্লাস্টিকের ছাউনি। পুকুরের পাড়েও এক অবস্থা। ওই সব অস্থায়ী ছাউনির নীচেই রাত কাটাচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। স্ত্রীরোগ বিভাগের সামনেও রয়েছে প্লাস্টিকের এমন ঘেরাটোপ। সেখানে শুয়ে থাকা যুবক বিবেক সোনকারের বক্তব্য, ‘‘এখানে প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। রাতে ঠান্ডা লাগে, তাই প্লাস্টিক টাঙাতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া কী করব?’’ বক্ষরোগ বিভাগে ওঠার ঢালু রাস্তাও ছাড় পায়নি, সেখানেও রয়েছে প্লাস্টিকের ঘর। জরুরি বিভাগের সামনের প্রতীক্ষালয়ে তো গাদাগাদি ভিড় লেগেই থাকে।

হাসপাতাল চত্বরে প্লাস্টিকের ছাউনির কথা মানছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষও। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘সকাল হলেই পুলিশ ওঁদের তুলে দেয়। প্লাস্টিক পেতে শুতে পারেন পরিজনেরা। কিন্তু রাতে প্লাস্টিক টাঙিয়ে কার্যত গুমটি বানিয়ে থাকাটা যথেষ্ট বিপজ্জনক। কেউ যাতে ওই ভাবে প্লাস্টিকের ছাউনি বানিয়ে না থাকেন, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে আবার জানানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement