কলকাতা পুরসভা। ফাইল চিত্র।
জুজুর ভয় নয়। পিকে-র ভয়! তবে শোনা যাচ্ছে, এই ভয়ে নাকি কাজ হচ্ছে জুজুর ভয়ের চেয়েও বেশি! পিকে-র নাম ব্যবহার করে সহজেই কাজ হাসিল হচ্ছে বলে একাধিক জেলা থেকে শোনা যাচ্ছিল। এ বার কলকাতা পুরসভাতেও তার রেশ পড়েছে। পুরসভায় অনেকেই একে বলছেন ‘পিকে-র জুজু’।
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার পরিষেবা পেতে পিকে-র নাম নেওয়ার একাধিক খবর মিলেছে। ওই সব ক্ষেত্রে কাজ দ্রুত হয়ে গিয়েছে ঠিকই, তবে তাঁরা আদৌ পিকে-র লোক কি না, তা যাচাই করার সাহস দেখাতে চাননি কেউ। পুর প্রশাসনের একটাই চিন্তা, পরিষেবা পেতে পিকে-র নাম ব্যবহার করে কেউ তাদের বিভ্রান্ত করছেন না তো? তবে এই মুহূর্তে এর সত্যতা যাচাইয়ের সাহস দেখাচ্ছেন না পুরকর্তারাও।
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি রাজ্যবাসীর পূর্ণ আস্থা অর্জনে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর কাজ শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গে। ইতিমধ্যেই কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক, দলের শাখা সংগঠনের সদস্য থেকে কর্মকর্তা— সর্বস্তরের লোকজনকেই ফোন করে এলাকার খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে পিকে-র সংস্থার পক্ষ থেকে। কখন, কী কারণে পিকে-র সংস্থার ফোন আসবে, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যেই পিকে-র নাম করে কেউ কেউ পুর পরিষেবা চাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন শাসক দলের স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে পুরসভার কর্তব্যরত অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারেরাও।
গত ১৪ অগস্ট, বুধবার ‘টক টু মেয়র’ অনু ষ্ঠানে যাদবপুর এলাকা থেকে একটি ফোন আসে মেয়রের কাছে। জনৈক নাগরিক জানান, তিনি পানীয় জল পাচ্ছেন না। খুব অসুবিধায় পড়েছেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম ওই ব্যক্তির কাছ থেকে সমস্যার কথা বিস্তারিত ভাবে শুনে তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘চিন্তা করবেন না।
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের লোক গিয়ে দেখে নেবে।’’ পরে ওই অনুষ্ঠানে হাজির জল সরবরাহ দফতরের অফিসারদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি।
মেয়রের নির্দেশ মতো জল সরবরাহ দফতরের কর্মীরা দিন দু’য়েকের মধ্যেই সেখানে যান। দফতর সূত্রের খবর, ওই কাজের জন্য মাটির নীচে থাকা পাইপ পরীক্ষা করা দরকার। সেই কাজ করার জন্য পুরসভার পাইপলাইনের মিস্ত্রি ওই ব্যক্তির ঠিকানায় হাজির হন। পরে জল সরবরাহ ব্যবস্থা দেখে জানান, মাটির নীচে থাকা জলের পাইপ দেখতে রাস্তা খুঁড়তে হবে। ফেরুল পরিষ্কার করতে হবে। সেই কাজ যাতে দ্রুত করা হয়, তা জানিয়ে পাইপের মিস্ত্রিকে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি পিকে-র লোক। কাজটা তাড়াতাড়ি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।
পিকে-র লোক— এই বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জল সরবরাহ দফতরে পদস্থ কর্তাদের কানে। কাজ শুরুও হয়ে যায়। কিন্তু রাস্তা কাটা নিয়ে স্থানীয় মহলে আবার আপত্তি ওঠে। সেই অসন্তোষ মেটাতে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন জল
দফতরের কর্মীরা।
এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। টালিগঞ্জ, বেহালা, শ্যামবাজারেও প্রশান্ত কিশোরের নাম করে কেউ কেউ কাজ হাসিলের চেষ্টা করছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। বিষয়টি নিয়ে জল সরবরাহ দফতরের কোনও কর্তা মুখ খুলতে চাননি। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেননি পুর কমিশনারও। তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কে পিকে-র লোক, কে নয় তা জানি না। জানার কথাও নয়। শহরবাসীর সমস্যার সমাধানটাই আমাদের কাজ।’’
যদিও পুরসভার অন্দরে এখন অন্যতম রসিকতা, মুখ খুললেই প-য় পিকে আসবে তেড়ে!