কলকাতা বিমানবন্দর। ফাইল চিত্র।
অন্য বিমানকে উড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। কিন্তু সেই নির্দেশ বুঝতে ‘ভুল’ করেন আর একটি বিমানের পাইলট। ফলে একই রানওয়ের মধ্যে চলে আসে দু’টি যাত্রিবাহী বিমানই! এক মাস আগে কলকাতা বিমানবন্দরের এই ঘটনার তদন্তে নেমে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। আর সে কারণে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) কর্তারা মনে করছেন, এটিসি-র সঙ্গে কথা বলার সময়ে আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত পাইলটদের। না-হলে আগামী দিনে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
ককপিটে বসা পাইলটের সঙ্গে সারা দিনে অনেক জরুরি কথা চালাচালি হয় এটিসি-র। কর্তাদের মতে, এই সময়ে পাইলটের মনঃসংযোগে সামান্য
বিচ্যুতিও বড়সড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন হয়েছিল গত ১৭ মে, কলকাতা বিমানবন্দরে। সে দিন সকাল ৬টা ২৪ মিনিটে ১৩৮ জন যাত্রীকে নিয়ে রানওয়েতে ঢোকার অনুমতি পেয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান এআই-৭৫৩। প্রধান রানওয়ের রাজারহাটের (উত্তর) দিক দিয়ে ঢুকে ওড়ার জন্য প্রস্তুত হয় শিলচরগামী ওই বিমান। একই সময়ে বিরাটির দিকের রানওয়ের কাছে অপেক্ষা করার কথা ছিল
শিলচরগামী স্পাইসজেটের বিমান এসজি ৩২১৩-এর। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি উড়ে গেলে তার পরেই ৬০ জন যাত্রী-সহ বিরাটির দিক থেকে ওড়ার কথা ছিল ওই ছোট বিমানটির। কিন্তু দেখা যায়, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যখন ওড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বিরাটির দিক থেকে সেই একই রানওয়ের মধ্যে মুখ ঢুকিয়েছে স্পাইসজেটের বিমানটি! প্রথম বিমানের পাইলট দূর থেকে অন্য বিমানটিকে দেখে এটিসি-কে
বিষয়টি জানান।
নিরাপত্তার নিরিখে এই ধরনের ঘটনা বড়সড় গাফিলতি বলে মনে করা হয়। কারণ কোনও ভাবেই একটি রানওয়েতে একই সঙ্গে দু’টি বিমানের থাকার কথা নয়। দিল্লিতে জমা পড়া ডিজিসিএ-র তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সে দিন স্পাইসজেটের পাইলট এটিসি-র বার্তা বুঝতে ভুল করার কারণেই ওই কাণ্ড। যে ব্রাভো ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে ওই রানওয়েতে ঢুকেছিলেন তিনি, সেটি দিয়ে তার আগেই একটি বিমান উড়ে যায়। অভিযোগ, ওই পাইলট তাই আশা করেন যে এর পরে তাঁকেই ওড়ার অনুমতি দেবে এটিসি। ঘটনাচক্রে, সে দিন এয়ার ইন্ডিয়া ও স্পাইসজেটের উড়ান দু’টির নম্বরের (এআই ৭৫৩ এবং এসজি ৩২১৩) মধ্যে একটি সংখ্যা এক ছিল। তাই সেখানে বুঝতে ভুল হয় ওই পাইলটের।
তদন্তকারীদের মতে, এ ক্ষেত্রে এটিসি-র নির্দেশ মনোযোগ দিয়ে পুরোটা শোনেননি বিমানচালক। কারণ বিমানের নম্বরের একটি সংখ্যা এক থাকলেও বাকিটা অনেকটাই আলাদা। এ ছাড়া অনুমতি পাওয়ার পরে সাধারণত পাইলট ‘রেডি টু টেক-অফ’ বার্তা পাঠান এটিসি-কে। তদন্তে জানা গিয়েছে, সে দিন একই চ্যানেলে ওই দুই পাইলট একই বার্তা পাঠাতে যান। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার বার্তা স্পষ্ট শোনা গেলেও স্পাইসজেটের আওয়াজ শোনা যায়নি। ফলে এটিসি-ও প্রথমে বুঝতে পারেনি, কী ঘটতে চলেছে।
এই ঘটনার দিন তিনেক আগে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় নেমে ভুল ট্যাক্সিওয়েতে ঢুকে পড়েছিল স্পাইসজেটের আর একটি বিমান। সে সময়ে সেই রোমিয়ো ট্যাক্সিওয়েতে জনা আটেক কর্মী ঘাস সরানোর কাজ করছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে ছুট দিতে হয় তাঁদের। বেগতিক দেখে স্পাইসজেটের পাইলটও ব্রেক কষে রোমিয়ো ট্যাক্সিওয়েতেই বিমান দাঁড় করান। সেই ঘটনারও তদন্ত করছে ডিজিসিএ।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।