কলকাতার পুজো। নিজস্ব চিত্র।
উৎসবের রোশনাইয়ে রঙিন অষ্টমীর সন্ধে। মণ্ডপে মণ্ডপে জনস্রোত। যে দিকে চোখ যায় শুধুই কালো মাথার ভিড়। পুজোর এই ক’দিন সবাই যেন উৎসবের আনন্দে বাঁধন ছাড়া!
পুজোর সময় দর্শকদের আনন্দ যাতে মাটি না হয়, তার জন্যেই তো পঞ্চমীর দিন থেকে পথে রয়েছেন পুলিশ, দমকল, সিইএসসি-সহ জরুরি পরিষেবার কর্মীরা। দিনরাত এক করে ওঁরা নিরাপত্তা এবং পরিষেবা দিচ্ছেন বলেই নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারছেন শহরবাসী। চেতলা অগ্রণী থেকে বড়িশা ক্লাব। উত্তরের কাশী বোস লেন, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে বেহালা নতুন দল, ম্যাডক্স স্কোয়ার থেকে পাটুলী সার্বজনীন।
পুজোর সময় পরিবার, পরিজনদের সান্নিধ্য-বঞ্চিত এই মানুষগুলির কাছে কর্তব্যই সবার আগে। যেমন এ বছর পুজোয় আলিপুরদুয়ারে নিজের বাড়িতেই ফিরতে পারেননি মহম্মদ ইলিয়াস ইসলাম। কলকাতা পুলিশের সপ্তম ব্যটেলিয়ানে কর্মরত ইলিয়াস। পঞ্চমীর দিন থেকে আজ এ প্যান্ডেলে, তো কাল ও প্যান্ডেলে ডিউটি করে চলেছেন। ইলিয়াসের মতোই মুখে হাসি রেখে ডিউটি করে চলেছেন প্রায় ৮ হাজার পুলিশ কর্মী। এই সময় ডিউটির ধরনও অন্য দিনের তুলনায় আলাদা। নিরাপত্তার জন্যে অতিরিক্ত সময়ে ডিউটি করতে হয় ওঁদের। বাইক-গাড়ি নিয়ে চালকেরা যাতে বেপরোয়া না হয়েওঠেন, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।
আরও পড়ুন- দরজা খুলল শবরীমালার, ঢুকতে পারলেন না মহিলারা
আরও পড়ুন- বয়স অনুয়ায়ী কুমারী পুজোর কন্যাদের কী নামে ডাকা হয় জানেন?
সকলে যখন আনন্দে মেতে রয়েছেন, তখন ওঁদের নজর গাড়ির গতির উপরে। সাউথ ডিভিশনে কর্মরত সার্জেন্ট শান্তনু হালদারের কথায়: “পুজোর সময় গতির উপর আমাদের সব সময়ই নজর থাকে। কেউ হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে বা মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালালে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। উৎসবেরআনন্দে মেতে থাকেন মানুষজন। বাইরে থেকেও পর্যটকেরা আসেন। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাই আমাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জে।”
একই ভাবে দমকলের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পুজোর এই ক’দিন। কলকাতায় বাড়ির এবং বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। রাস্তায় এমনিতেই গাড়ির এবং মানুষের ঢল নামে। হঠাৎ করে আগুন লাগলে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয় দমকলকে বাহিনীকে।
দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, “দমকলের কর্মীদের যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয়।”
পুজোর এই ক’দিন বিদ্যুতের চাহিদাও সব থেকে বেশি থাকে। তাই কলকাতা এবং শহরতলির বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রায় ৬ হাজার কর্মীর সব সময়ই ব্যস্ত থাকেন। সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভস) অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। পুজোর সময় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্যে আমার সব সময়ই তৈরি থাকি। এ বছরও আমরা পরিবারের মতো কাজ করে চলেছি।”