প্রতীকী ছবি
‘‘ঝড়ের পরে জল নেই, আলো নেই, এ বার কি করোনা ঢুকবে! এখন ঘর ভাড়া দেওয়া যাবে না।’’ এ কথা বলে গত সোমবার ফোন কেটে দেন পুরনো বাড়িওয়ালাই। এর পর থেকে আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি কলকাতার এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত মুম্বইয়ের বাসিন্দা প্রোজ্জ্বল সিংহ। মুম্বই থেকে ফোনে উদ্বেগ নিয়ে প্রোজ্জ্বল বলেন, ‘‘আমার উপসর্গ নেই। তবু কলকাতায় পৌঁছলেই ১৪ দিন বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকতে বলেছে কোম্পানি। কিন্তু বাড়িওয়ালা ঘর ভাড়া না দিলে উঠব কোথায়?’’
প্রোজ্জ্বল জানান, তাঁর সংস্থা থেকে ৪ জুনের মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। প্রথমে ১৪ দিন বাড়িতেই কোয়রান্টিনে থেকে অফিসের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মী যে কলকাতায় ফিরছেন সেই প্রমাণ দিতেও বলেছে সংস্থা। যেতে দেরি হলে যদি চাকরি না থাকে, এই ভেবে দ্রুত বিমানের টিকিট কেটে ফেললেও এখন গোটাটাই অনিশ্চিত।
এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চতুর্থ দফার লকডাউনের মধ্যেই খুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভিন্ রাজ্যের কর্মীদের বড় অংশেরই দাবি, করোনার আতঙ্কে বাড়িওয়ালা তাঁদের ঘর ভাড়া দিতে চাইছেন না। অনেকেই বিমানের টিকিট কাটার পরে পুরনো ঠিকানায় ফিরতে চেয়ে ফোন করে শুনেছেন, ‘‘ভাড়া বাকি থাকলে থাকুক, অন্য রাজ্য থেকে আসা কাউকেই ঘর দেওয়া যাবে না।’’ বেশি সমস্যায় পড়ছেন মুম্বই এবং দিল্লি থেকে আগতেরা। এই পরিস্থিতিতে অফিসও তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। পরিস্থিতি এমন যে, অনেকেই অন্তত ১৪ দিন কর্মক্ষেত্রের কাছে থাকতে হোটেল খুঁজছেন!
গত রবিবার এক নির্দেশিকা দিয়ে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, বিমানে বা ট্রেনে কলকাতায় আসা যাত্রীদের একটি ফর্মে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। বিমানবন্দর ও স্টেশনে প্রত্যেক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে। সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আর লক্ষণ না থাকলে ১৪ দিন নিজের বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। ওই সময়ে সামান্যতম লক্ষণ দেখা গেলেও স্থানীয় চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
দিল্লির ছাতারপুরের বাসিন্দা, পেশায় এ শহরের এক রেস্তরাঁর শেফ সুমন ঝা বলছেন, ‘‘কাজে ডেকে নিলেও কলকাতায় ফেরার পরে ১৪ দিন রেস্তরাঁয় যেতে বারণ করা হয়েছে। বাড়ি না থাকলে কী ভাবে কোয়রান্টিনে থাকব!’’ তাই তিনি ঠিক করেছেন, কলকাতায় নেমেই সরকারি কোয়রান্টিনে তাঁকে রাখার অনুরোধ করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও সরকারি জায়গায় রাখতে অনুরোধ করব। যদিও ওখানে রাখার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু কিছু করার নেই। গত দু’মাস বেতন হয়নি। হোটেলে থাকার টাকা নেই।’’
ভোপালের বাসিন্দা, কলকাতার এক ওষুধ সংস্থার কর্মী অরূপ সোনকার আবার শহরে নেমেই আইনের সাহায্য নিতে সোজা থানায় যাবেন। তাঁর দাবি, ‘‘বাঘা যতীন শ্রী কলোনির ভাড়াবাড়িতে মালিক ঢুকতে দেবেন না বলে দিয়েছেন। অগ্রিম টাকা নিয়ে কেউ এ কাজ করেন কী করে! পুলিশকে সেটাই বলব। না হলে যাব কোথায়?’’
লালবাজার যদিও জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে এ নিয়ে সচেতনতা প্রচার ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার লালবাজারের এক কর্তা শুধু বললেন, ‘‘অন্য রাজ্যের বাসিন্দা মানেই তিনি করোনা নিয়ে আসছেন, বাড়িওয়ালাদের এই ভুল ধারণা ভাঙার চেষ্টা করা ছাড়া আর কী করতে পারি! তবে আইন ভঙ্গের কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’