Candles

আলোর লড়াইয়ে টেক্কা দিতে প্রস্তুতি দিনভর

রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ যদুবাবুর বাজারে চড়া রোদে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন নিমাই প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৬
Share:

হিড়িক: কলেজ স্ট্রিটের দোকানে চলছে মোমবাতি বিক্রি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ভরা লকডাউনেও প্রস্তুতির অন্ত নেই! শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ‘মহাশক্তিকে জাগ্রত’ করার জন্য ঘরের আলো নিভিয়ে অন্য বাতি জ্বালানোর ডাক দেওয়ার পরেই সংসার চালানোর জরুরি সামগ্রীর তালিকায় ঢুকে পড়েছিল মোমবাতি এবং প্রদীপ। রবিবার শহরের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেল, সেই তালিকা নিয়ে সকাল সকাল পথে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই।

Advertisement

উল্টোডাঙার মোড়ে ট্র্যাফিক গার্ডেরই এক কর্মরত পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর জন্য এ বার রাস্তায় ঘোরার নতুন ছাড়পত্র পেয়েছেন অনেকে। মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন দুই যুবক। ধরার সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, “প্রদীপ কিনতে যাচ্ছি!’’ পাশে দাঁড়ানো অন্য পুলিশকর্মীর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘লকডাউনের মধ্যেও রাত ন’টার প্রস্তুতি ভালই চলেছে।’’ শব্দবাজিও যে সেই প্রস্তুতির অঙ্গ ছিল তা অবশ্য বোঝা গিয়েছে রাত বাড়তেই।

এর আগে জনতা কার্ফুর দিন বিকেল পাঁচটায় জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের অভিবাদন জানানোর নামে যে চিত্র দেখেছে শহর, তার জন্য অবশ্য কোনও প্রস্তুতির দরকার পড়েনি বলেই মত অনেকের। কিন্তু রবিবার যা পালন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন, সে জন্য কিছুটা হলেও দরকার ছিল প্রস্তুতির। তার আয়োজনেই অনেকে শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

Advertisement

রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ যদুবাবুর বাজারে চড়া রোদে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন নিমাই প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি। দু’হাতে ব্যাগ ভর্তি জিনিস থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দেখে এক আনাজ বিক্রেতার প্রশ্ন, ‘‘আর কী চাই? বলুন না।’’ প্রশ্নকর্তার দিকে না তাকিয়ে নিমাইবাবু বলেন, ‘‘টর্চ লাগবে। আছে?’’ রাত ন’টার জন্য কিনছেন? ভদ্রলোকের মন্তব্য, ‘‘কিছু তো করতে পারছি না। তবু যদি এটা করে পাশে আছি বোঝানো যায়, তাই কিনে রাখছি।’’ কলেজ স্ট্রিটের মুদির দোকানে আবার ভরসন্ধ্যায় ভিড় জনা কুড়ি ক্রেতার। কেউই ছোঁয়াচ বাঁচাতে দূরত্ব বজায় রাখায় কথা ভেবেছেন বলে দেখে মনে হল না। সেখানেই এক ক্রেতা মোমবাতি চেয়ে নিয়ে হাতে তুলে পরখ করে বললেন, ‘‘একটু মোটা দেখে রঙিন মোম দিন। সরু মোমে চোখে পড়বে না!’’ বিক্রেতা গলা নামিয়ে বলেন, ‘‘ঠিকই আছে, যেন প্রতিযোগিতা চলছে।’’ রাত বাড়তেই যে প্রতিযোগিতা হয়েছে শব্দবাজি ফাটানো নিয়েও। দিনের শুরুতে অবশ্য প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি চোখে পড়েনি। এর মধ্যেই শহরের ভাঁড়পট্টিগুলি থেকে প্রায় বারো হাজার প্রদীপ বিক্রি হয়েছে বলে খবর। সেখানকার ভাঁড় ব্যবসায়ী রাম প্রজাপতি বলেন, ‘‘মোবাইল জ্বালাতে বলেই গোলমাল হল। না হলে প্রদীপ আরও বিক্রি হত।’’

রাত ঠিক ন’টায় বড়বাজারের দশকর্মার দোকানে আগের জনের থেকে দু’ফুট দূরত্বে দাঁড়ানো এক ব্যতিক্রমী ক্রেতা জানালেন, সবাই আলো জ্বালাতে ব্যস্ত। দোকান ফাঁকা দেখে তাই চাল কিনতে বেরিয়েছেন তিনি। মোদীর কথা রাখবেন না? ভদ্রলোকের মন্তব্য, ‘‘মোমবাতি আমিও কিনেছি। কিন্তু ন’টায় জ্বালানোর জন্য নয়, এই অত্যুৎসাহীদের জন্য বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে ভেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement