Durga Puja 2023

শহর জুড়ে ভরপুর পুজোর মেজাজ, কেনাকাটা সেরেই মণ্ডপের পথে

পুজো-জনতার ভিড় এ দিন সব চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে শোভাবাজার ও বাগবাজার চত্বরে। শোভাবাজার, শ্যামবাজারের মতো মেট্রো স্টেশনগুলিতে সকাল ১০টা থেকেই ছিল থিকথিকে ভিড়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৫
Share:

উৎসাহী: কুমোরটুলিতে তৈরি ঠাকুর দেখার ভিড় মহালয়ার সকালে।  ছবি: রণজিৎ নন্দী।

উত্তরে সকাল থেকেই কুমোরটুলির প্রতিমার সঙ্গে ছবি তোলার ভিড়। এর পরে নতুন পোশাকে আশপাশের মণ্ডপ ঘুরে দেখার তৎপরতা। দক্ষিণে আবার কেনাকাটা আগে। তার পরে কাজ শেষ হলেই ঠাকুর দেখে ফেরার চেষ্টা। শনিবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, মহালয়ার সকাল থেকেই সর্বত্র ভরপুর পুজোর মেজাজ! যা সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হল পুলিশকে। বিশেষ সুবিধা হল না বাড়তি পুলিশকর্মী নামিয়েও। এক সময়ে বেশ কিছু রাস্তা গাড়ি চলাচলের জন্য বন্ধও করে দিতে হল তাদের। দিনের শেষে যা নিয়ে অনেকেরই মন্তব্য, ‘‘মহালয়াতেই যদি এই হয়, তা হলে পুজোর ক’দিন কী হবে?’’

Advertisement

পুজো-জনতার ভিড় এ দিন সব চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে শোভাবাজার ও বাগবাজার চত্বরে। শোভাবাজার, শ্যামবাজারের মতো মেট্রো স্টেশনগুলিতে সকাল ১০টা থেকেই ছিল থিকথিকে ভিড়। শাড়ি, পাঞ্জাবি— নতুন পোশাক পরে বেরিয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। হাতে হাতে ক্যামেরা। সেই ভিড়ই এর পরে পথে নেমে হেঁটে এগিয়েছে কুমোরটুলির পটুয়াপাড়ার দিকে। যার জেরে এক সময়ে রবীন্দ্র সরণির যান চলাচল কার্যত থমকে যায়। কুমোরটুলির ভিতরে ঢুকতে না পেরে তখন রাস্তাতেই শুরু হয়ে যায় ছবি তোলা। গাড়ির জটের মাঝেই নিজস্বী নিতে থাকা এক তরুণী বললেন, ‘‘মহালয়ায় কুমোরটুলি শহরের প্রিয় নিজস্বী জ়োন। এখানে না এলে পুজোর শুরুটা ভাল হয় না। প্রতিমার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিয়ে সকলেই উৎসব শুরু করতে চান।’’ সেখানেই একটি প্রতিমাকে মণ্ডপে পাঠানোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু শিল্পীরা বিরক্ত প্রতিমার সঙ্গে ছবি তুলতে দেওয়ার একের পর এক অনুরোধ আসতে থাকায়। সেখানেই প্রতিমার সঙ্গে এক মহিলার ছবি তুলে দিতে ব্যস্ত চিত্রগ্রাহক বললেন, ‘‘কে শুরু করেছিলেন জানি না, তবে মহালয়ায় কুমোরটুলি সুপারহিট। এখান থেকে রাজবাড়ি যাব। সেখানেও মডেলরা অপেক্ষা করছেন।’’ সেখানেই এক জায়গায় আবার এক প্রতিমা শিল্পীকে দেখা গেল, দোকানের সামনে টাঙিয়ে রেখেছেন একটি বোর্ড। সেটি পেরিয়ে কারও ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। তাতে লেখা, ‘নিজেকে প্রতিমা ভাবা বন্ধ করুন। আমাদের ঠাকুর বানাতে দিন। ছবি তোলার হলে মণ্ডপে গিয়ে তুলুন।’ এই বার্তায় অবশ্য কান নেই আশপাশের কারওই। ওই বোর্ডকে ঘিরে দাঁড়িয়েও ছবি তোলানোর ধুম চোখে পড়ল।

কুমোরটুলির এই দমবন্ধ পরিস্থিতি আরও করুণ চেহারা নেয় দুপুরের পরে, তর্পণ সেরে ঘাট থেকে ফেরা লোকজনের ভিড়ে। সেই সময়ে ওই চত্বরের বেশ কিছু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ওই অঞ্চলের কিছু বাসিন্দাকেও যথেষ্ট ঝক্কি পোহাতে হয় পাড়ায় ঢুকতে। পরিস্থিতি আন্দাজ করে বেলার দিকেই ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা বৈঠকে বসেন। পরে তাঁরা জানান, আজ, রবিবার থেকে পরিস্থিতি অন্য ভাবে সামলানো হবে। এলাকার বাসিন্দাদের জন্য গাড়ির এক ধরনের বিশেষ স্টিকার চালু করার ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। উত্তরের নতুন প্রজন্মের এই ভিড় এর পরে চোখে পড়ে শেষ মুহূর্তের কাজ চলা কুমোরটুলি সর্বজনীন, আহিরীটোলা সর্বজনীন, কাশী বোস লেন, হাতিবাগান সর্বজনীন এবং বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর মণ্ডপে। তবে, মধ্য এবং দক্ষিণ কলকাতায় বেশি ছিল কেনাকাটার ভিড়। তার পরে কাজ শেষে অনেককেই দেখা গিয়েছে মণ্ডপের পথে। ধর্মতলায় পুজোর কেনাকাটায় ব্যস্ত এক তরুণী বললেন, ‘‘আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। যত ভিড়ই হোক, আজ আর কালকের মধ্যেই সব সেরে ফেলতে হবে। ফেরার সময়ে পারলে দুটো ঠাকুর দেখেই ফিরব।’’

Advertisement

গড়িয়াহাটে আবার কেনাকাটার ভিড় এতই বেশি যে, প্রতিটি সিগন্যাল তিন মিনিট করে বন্ধ রাখতে হয় পুলিশকে। সিগন্যাল খুললেও আগে পথচারীদের সরিয়ে তার পরে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। রাস্তায় দাঁড়িয়েই দরদামে ব্যস্ত এক মহিলা বললেন, ‘‘আজই শেষ কেনাকাটা। রাত পর্যন্ত চলবে। মেয়ে কাল থেকেই ঠাকুর দেখতে বেরোবে বলেছে।’’ আর এক মহিলা কেনাকাটার মাঝেই সঙ্গীর দিকে ফিরে বললেন, ‘‘কেনা তো প্রায় শেষ। বড় ঠাকুরগুলো দেখে ফিরে যাই চলো। বারাসত থেকে রোজ তো আসা সম্ভব নয়!’’ সেখানেই বিক্রেতার মন্তব্য, ‘‘মহালয়া তো কী, মণ্ডপগুলোর কাছে গিয়ে দেখুন, আজ থেকেই পুজো।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement